অসুখী অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ফিরে যাক: ট্রাম্প

অভিবাসীদের অভিযোগ শুনে তাঁদের ঘরে পাঠিয়ে দেওয়াই সমীচীন মনে করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স।
অভিবাসীদের অভিযোগ শুনে তাঁদের ঘরে পাঠিয়ে দেওয়াই সমীচীন মনে করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে চলমান অভিবাসন–সংকট নিরসনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ডেমোক্র্যাট ও মানবাধিকারকর্মীরা। এরই মধ্যে গত বুধবার ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় তাঁরা বলেছেন, আটককেন্দ্রগুলোর অবস্থা নিয়ে যে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা অসুখী, তাদের বলে দেওয়া উচিত—‘তোমরা এসো না’। বার্তা সংস্থা রয়টার্স আজ শুক্রবার অভিবাসনপ্রত্যাশী আটককেন্দ্রগুলোর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের অবস্থান নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতা এবং নাগরিক অধিকার কর্মীদের অনেকে সম্প্রতি অভিবাসনপ্রত্যাশীর ভিড়ে ঠাসা যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আটককেন্দ্রগুলো সফর করে এসেছেন। সেখানকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, খাদ্য, পানি ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদার সংকটকে তাঁরা এককথায় দুর্বিষহ বলে মন্তব্য করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (ডিএইচএস) মহাপরিদর্শক গত মঙ্গলবার টেক্সাসের রিও গ্র্যান্ডে ভ্যালি অভিবাসনপ্রত্যাশী আটককেন্দ্রগুলোর কিছু ছবি প্রকাশ করেছেন। ধারণ ক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ অভিবাসী নিয়ে হিমশিম খাওয়া আটককেন্দ্রগুলোর ছবি বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছে।

টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি করা অভিবাসনপ্রত্যাশী আটককেন্দ্রগুলোর অবস্থা দেখে অবৈধ অভিবাসীরা যদি অসুখী হয়, সোজা বলে দিন, তাদের আসার প্রয়োজন নেই। ব্যস, সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল!’ ২০১৬ সালের নির্বাচন সামনে রেখে প্রচারণার সময় অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এজেন্ডার একটি মুখ্য অংশ বানিয়েছিলেন এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। তার জের ধরে অভিবাসীদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে তাঁদের বরং ফেরত পাঠিয়ে দেওয়াই সমীচীন মনে করছেন ট্রাম্প।

এর আগে টুইটারে এক বার্তায় ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমাদের সীমান্তচৌকির লোকজন হাসপাতালের কর্মী নয়, চিকিৎসক নয়, নার্সও নয়। তবু তারা অসাধারণ কাজ করছে। অবৈধ বিদেশিরা নিজেদের দেশে যে জীবন কাটিয়েছে, এখানে তার চেয়ে ঢের ভালো আছে, নিরাপদ আছে।’

এ সপ্তাহে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থার সমালোচনা বেড়ে গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব সংস্থার বর্তমান ও সাবেক এজেন্টরা তাঁদের ব্যক্তিগত ফেসবুক গ্রুপে অভিবাসীবিরোধী আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন এবং আইনপ্রণেতাদের কটাক্ষ করে পোস্ট করেছেন।

ডিএইচএসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান কেভিন ম্যাক অ্যালিনান গত বুধবার এসব ফেসবুক পোস্ট তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। আপত্তিকর এমন মন্তব্যকে তিনি বিরক্তিকর বলেছেন।

গত জুনে টেক্সাসের রিও গ্র্যান্ডে ভ্যালির পাঁচটি সীমান্তচৌকি পরিদর্শন করে ডিএইচএস। তারা দেখতে পায়, একেকটি সীমান্তচৌকিতে প্রায় আট হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী আটক রয়েছেন। যেখানে সাধারণ নিয়মে ৭২ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৪০০ বন্দী রাখার অনুমোদন রয়েছে। এসব সীমান্তচৌকিতে অভিবাসীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। শিশুদের জন্য কোনো আলাদা ব্যবস্থা নেই। একেকটি খাঁচায় গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে মানুষ। অনেক বন্দী গোসলের সুবিধা পাচ্ছেন না।

সীমান্তচৌকির পক্ষ থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রিও গ্র্যান্ড এলাকার সীমান্তচৌকিতে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত মোট ২ লাখ ২৩ হাজার ২৬৩ জনকে আটক করা হয়েছে, যা গত সময়ের চেয়ে ১২৪ শতাংশ বেশি।