ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব, মমতাকে আশ্বাস 'ভোটগুরু' প্রশান্তের

ভারতের ‘ভোটগুরু’ হিসেবে পরিচিত প্রশান্ত কুমার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী দিনে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। গতকাল শুক্রবার তৃণমূলের এক সাংগঠনিক সভায় এই আশ্বাসবাণী দেন প্রশান্ত।

সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিপর্যস্ত হয় তৃণমূল। বিজেপি বিপুল বিজয় পায়। নির্বাচনের ফলাফলে তৃণমূল শিবিরে আতঙ্ক দেখা দেয়। এরপরই নিয়ে আসা হয় প্রশান্ত কিশোরকে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের দলকে জিতিয়ে দিয়ে ‘ভোটগুরু’ হয়ে উঠেছেন।

২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনে জিতবেন বলে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন। তবে তার আগে তৃণমূল স্তরে দলকে সংগঠিত করতে প্রশান্ত কিশোরের সাহায্য নিচ্ছেন। প্রশান্ত কিশোর গত এক মাসে মমতার সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। উপস্থিত থেকেছেন দলের নেতা ও কর্মীদের বৈঠকেও। তবে এবার প্রশান্ত কিশোর সরাসরি নেতাদের মুখোমুখি হয়ে আশ্বাস দিয়েছেন, দলের জেতা সম্ভব।

জেলা স্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের কাঠামো গড়ার কাজে দলের যুব কংগ্রেস সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে শুক্রবার সাংগঠনিক বৈঠক করেছেন প্রশান্ত কিশোর। এদিন কালীঘাটে অভিষেকের অফিসে আড়াই ঘণ্টা স্থায়ী এই বৈঠকে দলের দুই শীর্ষ নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতিরা। উপস্থিত নেতাদের আশ্বাস দিয়ে প্রশান্ত কিশোর বলেছেন, তাড়াহুড়া করার প্রয়োজন নেই। পরিস্থিতি বদল করে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। আর এর জন্য হাতে এক বছরের বেশি সময় রয়েছে।

দলকে প্রশান্ত কিশোর পরামর্শ দিয়েছেন, দলের বর্তমানে চালু কাঠামো ভেঙে বুথ স্তর থেকে তথ্য পেতে বিধানসভা কেন্দ্রপিছু ১৫ জন ‘উপযুক্ত’ কর্মী বাছাই করুন। এই ১৫ জনের মধ্যে সব অংশের প্রতিনিধি রাখা দরকার। সেই সঙ্গে দলের বিধায়কদের নিজের কেন্দ্রে মাসে সাত-আট দিন কাটানোর পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। একই পরামর্শ দলের মন্ত্রীদের জন্যও। প্রশান্ত কিশোর মনে করেন, স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় বৃত্তের বাইরে থাকা অরাজনৈতিক বিশিষ্ট মানুষের সঙ্গে মেলামেশা বাড়ানো দরকার।

সংগঠন ও জনসংযোগ নিয়ে দলের যে ভাবনার কথা মমতা বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছিলেন, তাকেই আরও স্পষ্ট করেছেন প্রশান্ত কিশোর। বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের বিরোধী দলগুলোর জন্য রাজনৈতিক পরিসর ছাড়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও বুঝিয়েছেন। বিরোধীদের জায়গা দিলে তাদের শক্তি বোঝা যাবে। একই সঙ্গে বিরোধী ভোট ভাগের সম্ভাবনাও তৈরি করা যাবে। জেলা স্তরের নেতাদের রাজনৈতিক সংঘর্ষ এড়িয়ে থাকতে বলা হয়েছে। তাঁদের বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা কখনোই শাসক দলের পক্ষে যায় না। শাসক দল ও প্রশাসন সম্পর্কে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

প্রশাসনিক কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন প্রশান্ত। অবশ্য শুরুতেই প্রশান্ত কিশোর স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি দলের কোনো নেতা-কর্মীকে নির্দেশ দিতে পারেন না। সেটা দলের এখতিয়ার। তাঁর কাজ পরামর্শ দেওয়া। এ জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর কোনো আর্থিক লেনদেন নেই বলে দাবি করেছেন এই নির্বাচনগুরু। এর আগে মমতাও জানিয়েছেন, বড় বড় করপোরেট সংস্থা যেমন সামাজিক দায়িত্ব (সিএসআর) পালনের ক্ষেত্রে কাজ করে, প্রশান্তের সংস্থাও তেমনই তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য কাজ করতে পারে।