দিনহাটা শোকস্তব্ধ পেয়ারার মৃত্যুতে

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ফাইল ছবি
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ফাইল ছবি

পশ্চিমবঙ্গের দিনহাটার মানুষের কাছে তিনি পেয়ারা নামেই পরিচিত ছিলেন। সেই পেয়ারা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর খবর রোববার দুপুরেই পৌঁছেছিল দিনহাটায় এরশাদের ভাইয়ের পরিবার এবং বাল্যবন্ধুদের কাছে। সেই থেকে শোকস্তব্ধ ভাইয়ের পরিবার। রোববার কোনো রান্না হয়নি সেই পরিবারে। এরশাদের শেষ জানাজায় যোগ দিতে রোববারই ঢাকায় গিয়েছেন ভাইপো আহসান হাবিব। আজ সোমবার অপর এক ভাইয়ের ছেলে জাকারিয়া হোসেন ও বোন বেগম নাজিমা আসমানিও ঢাকায় পৌঁছান।

দিনহাটা শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এরশাদের পৈতৃক বাড়ি। এই বাড়িতেই বসবাস করেন তাঁর দাদার পরিবারের দুই ভাই ও তাঁদের পরিবার।

এরশাদের ভাইয়ের স্ত্রী জেবুন্নেসা বলেছেন, ‘বড় দাদা ছিলেন আমাদের পরিবারের ছাদ। বাড়িতে এলেই বরোলি মাছের ঝোল ও খেজুরের রসের মিষ্টি খেতে ভালোবাসতেন।’

কৈশোরের সহপাঠী ও বন্ধুদের মধ্যে যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদের মুখে এখন শুধুই পুরোনো দিনের কথা। যতবার দিনহাটায় এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে থাকতেন।

জেবুন্নেসা জানিয়েছেন, দুই মাস আগেই ভাইদের পরিবারের সবাই দেখা করতে গিয়েছিলেন। তখন থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। দিনহাটার পরতে পরতে এরশাদের অনেক স্মৃতি রয়ে গেছে।

পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটাতেই এরশাদের জন্ম। কৈশোরের একটা বড় সময় কাটিয়েছেন দিনহাটাতেই। দিনহাটায় এরশাদের বাবা ছিলেন খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি। তবে দেশভাগের সময় এরশাদের বাবা সীমান্তের ওপারে চলে গেলেও এরশাদের চাচারা থেকে গিয়েছেন দিনহাটাতেই। আর ছোটবেলায় কাটানো এই দিনহাটার টানে মাঝেমধ্যেই এরশাদ আসতেন দিনহাটায়। প্রথমে ২০০৯ সালে এবং পরে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে তিনি দিনহাটায় এসেছিলেন। দিনহাটা হাইস্কুলে পড়াশোনা করার সময় তাঁর সহপাঠী ছিলেন রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত কমল গুহ, চিকিৎসক প্রয়াত অসিত চক্রবর্তী, সংগীতশিল্পী প্রয়াত সুনীল দাস ছাড়াও দিনহাটা পুঁটিমারী হাইস্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক সুধীর সাহা প্রমুখ।

এইচ এম এরশাদ দিনহাটায় এলেই বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠতেন পুরোনো দিনের আলোচনায়। সাইকেলে চড়ে দিনহাটা ঘুরে বেড়ানোর দিনগুলোতে ফিরে যেতে চাইতেন। এমনই জানিয়েছেন তাঁর বাল্যবন্ধু সুধীর সাহা। দিনহাটায় এলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাঁকে সংবর্ধনা দিলে তিনি খুশি হতেন। এরশাদের মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করে দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেছেন, বাবার সহপাঠী ছিলেন এইচ এম এরশাদ। যে কবার তিনি দিনহাটা এসেছেন ততবারই তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে।

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রোববার সকাল পৌনে আটটায় মারা যান এরশাদ।