বিচ্ছেদের পর দিন বান্ধবীর সঙ্গে বেজোস

বিয়ে বিচ্ছেদের পরদিন উইম্বলডন ফাইলান ম্যাচ উপভোগের সময় ক্যমেরা বন্দী জেফ বেজোস ও বান্ধবী লরেন সানচেজ। ছবি: রয়টার্স
বিয়ে বিচ্ছেদের পরদিন উইম্বলডন ফাইলান ম্যাচ উপভোগের সময় ক্যমেরা বন্দী জেফ বেজোস ও বান্ধবী লরেন সানচেজ। ছবি: রয়টার্স

বিবাহ বিচ্ছেদের পরে বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজোস তাঁর বান্ধবীর সঙ্গে প্রথমবার জনসম্মুখে এসেছেন। গতকাল রোববার উইম্বলডন ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করার সময় তাঁরা ক্যামেরা বন্দী হন।

গণমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার এক প্রতিবেদনে বলছে, জেফের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ম্যাকেনজির আনুষ্ঠিক বিবাহ বিচ্ছেদ হলো গত শনিবার। এরপর দিনই জেফকে দেখা যায় বান্ধবী লরেন সানচেজকে নিয়ে রজার ফেদেরার ও নোভাক জোকোভিজের উইম্বলডনের ফাইনাল উপভোগ করছেন।

দীর্ঘ ২৫ বছর সংসারের পারে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে ম্যাকেনজির সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করেন আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। তাঁর বান্ধবী সাবেক টিভি অভিনেত্রী সানচেজও গত বছর স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের জন্য একটি মামলা করেন।

ব্লুমবার্গের কোটিপতি সূচক অনুসারে, ৫৪ বছর বয়সের জেফ বেজোসের এখন সম্পদের পরিমাণ ১৩৭ বিলিয়ন ডলার। তবে বিচ্ছেদের পর কোটিপতিদের তালিকায় অবনমন হবে জেফ বেজোসের। কমবে সম্পদের পরিমাণ। আর এতে করে মাইক্রোসফটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সামনে বিশ্বের এক নম্বর ধনী হওয়ার সুযোগ চলে আসবে। কারণ ৪৮ বছর বয়সী স্ত্রী ম্যাকেনজির সম্পদের পরিমাণ ৬৯ বিলিয়ন ডলার। ম্যাকেনজি এখন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী নারীর তালিকায় আছেন।

জেফ বেজোসের জন্ম ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের আলবুকার্কে। ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিকসের প্রতি ছিল তাঁর ব্যাপক আগ্রহ। ১৯৬০-এর দশকের জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন সিরিজ ‘স্টার ট্রেক’-এর বিশেষ ভক্ত তিনি। স্কুলে পড়ার সময়েই নিজেদের বাড়ির গ্যারেজে তৈরি করেন একটি ছোট গবেষণাগার। বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি কীভাবে কাজ করে তার খুঁটিনাটি জানতে দিনের বেশির ভাগ সময় ওই গ্যারেজেই পড়ে থাকতেন তিনি।

স্কুল ও উচ্চ মাধ্যমিক পেরোনোর পর জেফ বেজোস নিজের প্রিয় বিষয় কম্পিউটার অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ভর্তি হন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৮৬ সালে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে প্রিন্সটন থেকে কম্পিউটার অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষ করেন তিনি। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক খাতের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ওয়াল স্ট্রিটের তিনটি কোম্পানিতে কাজ করেন। ডিই শ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময় তাঁর মাথায় ঘুরতে থাকে ইন্টারনেটের অপার সম্ভাবনার কথা। ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে নতুন কী ব্যবসা দাঁড় করানো যায়, তখন সেটিই ছিল তাঁর মূল ভাবনা।

আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা, প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বেজোস জানিয়েছিলেন, বিশ্বের সেরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনের পরিকল্পনা নিউইয়র্ক থেকে সিয়াটলে গাড়ি চালানোর সময় করেছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে ডিই শ-এর চাকরি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে চলে যান তিনি। সেখানে এক বছর গবেষণার পর নিজের বাড়ির গ্যারেজে ১৯৯৫ সালের ১৬ জুলাই প্রতিষ্ঠা করেন আমাজন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে বই বিক্রি করাই ছিল বেজোসের প্রথম ব্যবসা। প্রথম এক মাসে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৪৫টি দেশে অনলাইনে ২০ হাজার ডলার বা ১৬ লাখ টাকার বই বিক্রি করে আমাজন। সে সময় অনলাইনে বইয়ের এমন বিক্রি ছিল অনেকটা অভাবনীয়।

এরপর শুরু হয় আমাজনের জয়যাত্রা। ১৯৯৮ সালে বইয়ের বাইরে গান ও সিনেমার সিডি বিক্রি করতে শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৭ সালে ডিজিটাল মাধ্যমে বই পড়ার যন্ত্র ‘কিন্ডেল’ বাজারে নিয়ে আসেন বেজোস। স্ক্রেপহিরো নামের একটি অনলাইন প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আমাজনের পণ্যসম্ভারে ৪০ কোটি পণ্য আছে।

বেজোস প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবেও পরিচিত। ২০০০ সালে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিন প্রতিষ্ঠা করেন। নিত্যনতুন উপায়ে আমাজনের ব্যবসা বাড়ানোর পাশাপাশি ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে ২৫ কোটি ডলারে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাটি কিনে নেন তিনি। বেজোস দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকাটি। বেজোস এক্সপেডিশন নামে ব্যক্তিগত ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড থেকে বিনিয়োগ করেন বেজোস। গুগলে প্রথম দিককার বিনিয়োগকারী হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে।