কাতারে বাংলাদেশি কর্মী আসা কমছে

কাতারে গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশি কর্মী আসার হার কমছে। অন্তত চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের চিত্র তাই বলছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কাতারে এসেছেন ৩৬ হাজার ৭০ জন বাংলাদেশি কর্মী। ২০১৮ সালের প্রথম ছয় মাসে এই সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার ১৬২ জন। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে ৪ হাজার ৯২ জন কর্মী কম এসেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন জনশক্তি, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) প্রকাশিত পরিসংখ্যানে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

বিএমইটি জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাত হাজার ৮৭১ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১০ হাজার ৭৪১ জন, মার্চ মাসে চার হাজার ৯৩৫ জন, এপ্রিল মাসে চার হাজার ৬২২ জন, মে মাসে চার হাজার ৯৩৯ জন এবং জুন মাসে দুই হাজার ৬৯২ জন কর্মী কাতারে এসেছেন।

কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ অবশ্য এই কর্মী আসার হার কমে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, এ দেশে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণ বাংলাদেশ থেকে কর্মী আসা কমেছে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে যেহেতু অনেক অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে বা শেষ হওয়ার পথে, তাই আগের মতো বিপুলসংখ্যক কর্মীর চাহিদা এখন নেই বলা চলে।

তবে কাতারের শ্রমবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য নতুন ভিসা ইস্যু না হওয়া সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রদূত কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন। তবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করবেন।

মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলে কাতার বাংলাদেশের অন্যতম বড় একটি শ্রমবাজার। বর্তমানে চার লাখের বেশি বাংলাদেশি কাতারে কর্মরত রয়েছেন। ২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে এখনো কাতারের বিভিন্ন কারিগরি খাতে লোকবলের চাহিদা রয়েছে। তবে দুদেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থবির হয়ে থাকায় বাংলাদেশের এই শ্রমবাজার সংকুচিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

বিএমইটির প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত ছয় মাসে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছেন সৌদি আরবে, যা চলতি বছর বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মীর শতকরা ৫৬ দশমিক ৭২ ভাগ। গত ছয় মাসে দেশটিতে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮৮ হাজার ৭৪৭ জনে।

উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত ছয় মাসে গেছেন এক হাজার ৬৫৮ জন বাংলাদেশি কর্মী, কুয়েতে গেছেন পাঁচ হাজার ১৪৩ জন, ওমানে গেছেন ৩৭ হাজার ৩৫২ জন এবং বাহরাইনে গেছেন মাত্র সাতজন বাংলাদেশি কর্মী।

সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, উপসাগরীয় অঞ্চলের ছয়টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে কমসংখ্যক কর্মী গেছেন বাহরাইনে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে কুয়েত। কাতার ও ওমানে যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি। তবে কাতারের মতো ওমানেও গত ছয় মাসে বাংলাদেশি কর্মী যাওয়ার হার কমেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী মোট কর্মীর ১০ দশমিক ৮৪ ভাগ কর্মী এসেছেন কাতারে, আর ওমানে গেছেন শতকরা ১১ দশমিক ২৩ ভাগ। অন্য দেশগুলোর বেলায় এই হার যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে শূন্য দশমিক ৫০ ভাগ, কুয়েতে এক দশমিক ৫৫ ভাগ।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে লেবাননে গেছেন দুই হাজার ৬৫১ জন, জর্ডানে গেছেন নয় হাজার ৭৯৮ জন,  লিবিয়ায় গেছেন মাত্র একজন এবং ইরাকে গেছেন আট হাজার ১৪১ জন বাংলাদেশি কর্মী। তবে গত ছয় মাসে মিশরে কোনো বাংলাদেশি কর্মী যাননি।