বিরোধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের সাংঘর্ষিক সংকেত

ইরান পারমাণবিক চুক্তি শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। ছবি: রয়টার্স
ইরান পারমাণবিক চুক্তি শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। ছবি: রয়টার্স

চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে গতকাল মঙ্গলবার মিশ্র সংকেত দিয়েছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি অনুযায়ী যে পরিমাণ ইউরেনিয়ামের মজুত থাকার কথা, তার সীমা অতিক্রম করার হুমকি দিয়েছেন। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, বিরোধ নিরসনের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে দেশ দুটি।

২০১৫ সালে হওয়া ছয় জাতি পারমাণবিক চুক্তি থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার কারণ হিসেবে ট্রাম্প বলেছিলেন, আগের চুক্তিটি ইরানের পক্ষে যায়, যা তেহরানকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে ও মধ্যপ্রাচ্যে অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার পরোক্ষ স্বাধীনতা দেয়।

ট্রাম্প ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করেন, যাতে দেশটি আলোচনার টেবিলে ফিরে আসে। এই উত্তেজনা যুদ্ধের রূপ নিতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করলেও যুক্তরাষ্ট্র তার পথ থেকে ফিরে আসেনি। ইরানও ক্রমে শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে। কারণ, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রতারিত হয়েছে বলে মনে করছে। একই সঙ্গে ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে বলে জানিয়েছেন ইরানের চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ আয়াতুল্লাহ খামেনি। বিশেষ করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে তেহরানের তেল রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছে ইরান।

গত মে ও জুন মাসে উপসাগরীয় অঞ্চলে তেলবাহী ছয়টি ট্যাংকারে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার জন্য ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র; যদিও তেহরান সব সময় এই অভিযোগ নাকচ করে আসছে। এ বিষয় নিয়ে কথার লড়াই চলতে থাকে দুই পক্ষের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে গত ২০ জুন ইরান জানায়, আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় হরমুজ প্রণালিতে তারা গুলি করে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করেছে। পরে বিষয়টি স্বীকারও করে যুক্তরাষ্ট্র। সঙ্গে অভিযোগ করে, এর আগের সপ্তাহেও ইরান মার্কিন একটি ড্রোনকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা যেকোনো সময় যুদ্ধে রূপ নেওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

আয়াতুল্লাহ খামেনি তাঁর ওয়েবসাইটে বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হিসাব অনুযায়ী, ইউরোপ এর মধ্যে ১১টি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, এর চেয়েও বেশি মেনেছি। এখন আমরা চুক্তি শিথিল করতে চাইলে তারা বিরোধিতা জানাচ্ছে। ব্যাপারটা ভীষণ অপমানজনক! আপনারা নিজেরাই তো কথা রাখেননি!’

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বার্তায় খামেনি বলেন, ‘আমরা চুক্তি শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’

জাতিসংঘের আণবিক শক্তি সংস্থার পরিদর্শকেরা গত সপ্তাহে নিশ্চিত করেছেন, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে গতি সঞ্চার করেছে। ২০১৫ সালের চুক্তিতে ১৫ বছরের জন্য নিম্নমানের ইউরেনিয়ামের (ইউরেনিয়াম-২৩৫, আইসোটোপের পরিমাণ যেখানে ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ) মজুত ৩০০ কেজিতে সীমিত রাখার কথা বলা হয়েছিল। বর্তমানে ইরানের মজুত করা আইসোটোপে ইউরেনিয়ামের পরিমাণ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

এর আগে খামেনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে এবং তাঁর জোরদার নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য ইউরোপীয় শক্তিকে দোষারোপ করেছেন। তবে গণমাধ্যমের সামনে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে এমন স্পষ্টভাবে এই প্রথম মুখ খুললেন তিনি। ইউরেনিয়াম মজুত করে পারমাণবিক বোমা তৈরির ক্ষেত্রে ইরানের কাছে ইউরোপের কোনো আবেদন যে ধোপে টিকবে না, তাও জানিয়ে দিয়েছেন।