দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিলা দীক্ষিত আর নেই

শিলা দীক্ষিত
শিলা দীক্ষিত

ভারতের দিল্লির তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা শিলা দীক্ষিত (৮১) মারা গেছেন। আজ শনিবার বিকেলে দিল্লির একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। কয়েক দিন আগে দিল্লির এস্কর্টস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে শিলা দীক্ষিতের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। ফর্টিস এস্কর্টস হার্ট ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান অশোক শেঠের নেতৃত্বাধীন চিকিৎসক দল তাঁর চিকিৎসা করছিলেন। হাসপাতালের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শিলা দীক্ষিত মারা গেছেন।’

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, শিলা দীক্ষিত সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তিনি দিল্লি কংগ্রেসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ বছরের জানুয়ারিতে তিনি দিল্লি কংগ্রেসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। উত্তর-পূর্ব দিল্লি থেকে এবারের লোকসভা নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মনোজ তিওয়ারির কাছে হেরে যান।

দলের বর্ষীয়ান এ নেতার মৃত্যুর খবরে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাহুল গান্ধী। এক টুইট বার্তার রাহুল বলেছেন, ‘শিলা দীক্ষিতের মৃত্যু সংবাদ শুনে আমি বিধ্বস্ত। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। এই শোকের মুহূর্তে তাঁর পরিবার ও দিল্লির জনগণের প্রতি আমি সমবেদনা জানাই। তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দিল্লিকে তিনি নিঃস্বার্থভাবে সেবা দিয়ে গেছেন।’

যে দলের হয়ে দীর্ঘ সময় রাজনীতি করেছেন, সে কংগ্রেসও বিশ্বস্ত এ নেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। দলটি এক টুইট বার্তায় বলেছে, ‘আজীবন কংগ্রেস করে যাওয়া শিলা দীক্ষিত তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দিল্লির চেহারাই বদলে দিয়েছিলেন। তাঁর পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই। এই শোকের সময়ে তাঁরা মানসিকভাবে শক্ত থাকুক।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও শিলা দীক্ষিতের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতার মৃত্যুতে টুইট করে নিজের শোক প্রকাশ করেছেন তিনি, ‘অমায়িক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন শিলা দীক্ষিত দিল্লির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর পরিবার ও সমর্থকদের প্রতি সমবেদনা রইল।’

এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও শোক জানিয়েছেন। রামনাথ কোবিন্দ টুইট করেছেন, ‘তিনি ক্ষমতায় থাকার সময় রাজধানী দিল্লির যে পরিবর্তন হয়েছে, তার জন্যই লোকে তাঁকে চিরকাল মনে রাখবে। তাঁর পরিবার ও সহকর্মীদের প্রতি সমবেদনা।’ শিলা দীক্ষিতের পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন যিনি সেই অরবিন্দ কেজরিওয়াল টুইট করে বলেছেন, ‘দিল্লির জন্য এ এক বিরাট ক্ষতি। তাঁর অবদান সব সময় স্মরণ করা হবে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। তাঁর আত্মা শান্তি পাক।’

দিল্লির অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিশেষ করে রাস্তাঘাট ও ফ্লাইওভারের উন্নয়নের জন্য শিলা দীক্ষিতকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তাঁর আমলে দিল্লির দূষণ, গণপরিবহনের সংকট এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছিল।

ইন্দিরা গান্ধীর মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ছিলেন শিলা দীক্ষিতের শ্বশুর উমা শংকর দীক্ষিত। শ্বশুরের হাত ধরে রাজনীতির ময়দানে অভিষেক হয়েছিল শিলা দীক্ষিতের। ১৯৮৪ সালে উত্তর প্রদেশের কনৌজ থেকে প্রথমবার লোকসভা নির্বাচনে নির্বাচিত হন তিনি। রাজীব গান্ধীর মন্ত্রী পরিষদের সদস্যও ছিলেন তিনি। পাঞ্জাবে জন্ম নেওয়া শিলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দ্বীপ দীক্ষিতও কংগ্রেসের নেতা হিসেবে কাজ করেছেন।