প্রিয়াঙ্কার জয়, মাথা নোয়াল উত্তর প্রদেশ সরকার

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

অবশেষে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রের গোঁয়ের কাছে মাথা নোয়াল উত্তর প্রদেশ সরকার। সোনভদ্র-কাণ্ডে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তিনি মির্জাপুর জেলার অতিথিশালা থেকে আজ শনিবার দিল্লি ফিরে যান। তবে যাওয়ার আগে তিনি জানিয়ে এসেছেন, আবার তিনি ফিরে আসবেন।

কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের কাছে পাঁচটি দাবি রেখেছেন। তিনি বলেছেন, নিহতদের পরিবারদের প্রত্যেককে ২৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। গোটা ঘটনার দ্রুত তদন্ত শেষ করা হোক। আদিবাসীদের জমির অধিকার দান, নিহতদের পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা এবং জমি বিবাদে গত কয়েক বছরে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করা হোক। পাশাপাশি প্রিয়াঙ্কার ঘোষণা, গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে কংগ্রেস ১০ লাখ টাকা করে অর্থ সাহায্য করবে।

উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে বারানসির দক্ষিণে সোনভদ্র জেলার উমধা গ্রামে আদিবাসীদের সঙ্গে জমির বিবাদকে কেন্দ্র করে গত বুধবার গুলি চলে। গুলিতে ১০ জন আদিবাসী নিহত ও ২৪ জন আহত হন। ওই আদিবাসীরা বহু বছর ধরে ওই জমি চাষ করে আসছিলেন। ওই ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে গত শুক্রবার প্রিয়াঙ্কা বারানসি থেকে সোনভদ্র রওনা হলে মির্জাপুরে তাঁদের পুলিশ আটকে দেয়। বলা হয়, সোনভদ্রে ১৪৪ ধারা জারি করা রয়েছে। প্রিয়াঙ্কা পুলিশ কর্তাদের বলেন, আইন বাঁচিয়ে তিনি মাত্র চারজনকে নিয়ে ওই গ্রামে যাবেন। কিন্তু তাতেও সম্মত হয়নি জেলা পুলিশ। প্রতিবাদে প্রিয়াঙ্কা ও কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা রাস্তায় বসে পড়েন। তাঁদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় চুনারে এক অতিথিশালায়। সেখানে কিছু সময় পর বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। প্রিয়াঙ্কাকে বলা হয় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে ফিরে যেতে বলা হয়। কিন্তু তিনি গোঁ ধরে থাকেন। বলেন, দুর্গতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা না করে তিনি ফেরত যাবেন না। এই টানাপোড়েনের মধ্যে সোনভদ্র থেকে কয়েকটি আদিবাসী পরিবার ওই অতিথিশালায় আসেন। প্রিয়াঙ্কা তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন, আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেন ও রাজ্য সরকারের কাছে কংগ্রেসের পক্ষে পাঁচ দফা দাবি রাখেন। এরপরই আবার ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রিয়াঙ্কা দিল্লি চলে যান।

গতকাল শুক্রবার রাত অতিথিশালাতেই কাটান প্রিয়াঙ্কাসহ রাজ্য কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। পুলিশ তাঁকে জেলে নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখালেও তিনি সোনভদ্র যাওয়ার দাবিতে অনড় থাকেন। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে ব্যর্থ হয়ে রাত একটায় পুলিশ ও প্রশাসনের বড় কর্তারা অতিথিশালা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর প্রিয়াঙ্কা গান্ধী একাধিক টুইট করেন। একটি টুইটে বলেন, নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা না করেই তাঁকে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাঁরা এক ঘণ্টা বসে ছিলেন। অন্য একটি টুইটে তিনি বলেন, কেন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার কোনো সদুত্তর কেউ দিতে পারেনি। কেউ কোনো কারণ দেখাতে পারেনি। যদিও মির্জাপুরের জেলা শাসক জানান, শান্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় প্রিয়াঙ্কাদের আটকানো হয়েছে। পাশাপাশি, বিজেপির পক্ষ থেকে কটাক্ষ করে সিদ্ধার্থনাথ সিং বলেন, সোনভদ্রে কি পর্যটন মেলা চলছে? একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে।

সোনভদ্রের ঘটনার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ ১৯৫৫ সালে কংগ্রেসের জমিনীতিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। দিল্লি ফেরার আগে প্রিয়াঙ্কা তার পাল্টা বলেন, ঘটনার দায় জওহরলাল নেহরুর ঘাড়ে ফেলবেন না। মুখ্যমন্ত্রী, এটা আপনার সরকারের ব্যর্থতা।