কর্ণাটক হারাল কংগ্রেস

রাহুল গান্ধী ও কুমারস্বামী। ছবি: রয়টার্স
রাহুল গান্ধী ও কুমারস্বামী। ছবি: রয়টার্স

কংগ্রেস-ধর্মনিরপেক্ষ জনতা দলের (জেডিএস) কাছ থেকে কর্ণাটক দখল করে নিল বিজেপি। আস্থা ভোট নিয়ে কয়েক দিনের টালবাহানার পর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কুমারস্বামী সরকারের পতন ঘটল। ২২৪ সদস্য বিশিষ্ট বিধানসভায় জোট সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ৯৯ জন বিধায়ক, বিজেপির পক্ষে হাজির ছিলেন ১০৫ জন। জোট সরকারের বিরুদ্ধে যাঁরা বিদ্রোহ করেছিলেন, তাঁরা সভায় উপস্থিত ছিলেন না।

আস্থা ভোটের ফল প্রকাশের পরপরই বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজ্যে তারা এক দুর্নীতি মুক্ত সরকার গড়বে। বিজেপি বলেছে, এই সঙ্গে রাজ্যে অনৈতিক জোটের অবসান ঘটল। এটা গণতন্ত্রের জয়। পাশাপাশি কংগ্রেসের অভিযোগ, টাকার জোরে বিজেপি পতন ঘটাল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের।

কুমারস্বামী সরকারের পতনের পর বিজেপি আরও একবার কর্ণাটকে সরকার গড়তে চলেছে। দেখার বিষয়, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিজেপির প্রবীণ নেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পা আরও একবার মুখ্যমন্ত্রী হন কি না। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ঠিক করেন, ৭৫ বছরের বেশি নেতাদের অবসর নেওয়ানো হবে। ইয়েদুরাপ্পার বয়স ৭৬। রাজ্যে বিজেপির সবচেয়ে বড় নেতা তিনিই। জোট সরকারের পতনের পেছনে তিনিই ছিলেন প্রধান চরিত্র। ইয়েদুরাপ্পাকে মুখ্যমন্ত্রী করার মধ্য দিয়ে বিজেপি ঘোষিত নীতির সঙ্গে আপস করে কি না সেটাই এখন দেখার।

এক বছর দুই মাস আগে কর্ণাটক বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপি একক বৃহত্তম দল হলেও নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। বিজেপিকে রুখতে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী রাতারাতি জেডিএস নেতা কুমারস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রী মেনে জোট সরকার গঠন করেন। মতাদর্শগত অমিল সত্ত্বেও রাহুল তা করেছিলেন বিজেপিকে আটকাতে। সেই চাল বিজেপিকে হতোদ্যম করলেও জোট সরকার শুরু থেকেই নড়বড়ে ছিল। এতটাই যে, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই একাধিকবার পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে চালালেও কখনোই সরকার থিতু হতে পারেনি।

বিজেপিও সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। লোকসভা নির্বাচনের বিপুল সাফল্য ও হতোদ্যম কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর পদত্যাগের পর বিজেপি উঠেপড়ে লাগে। জোট সঙ্গীদের ভাঙিয়ে তারা জোট সরকারের পতনের পথ প্রস্তুত করল। কংগ্রেস ও জেডিএসের যে সদস্যদের বিজেপি দলত্যাগ করায়, মঙ্গলবার তাঁরা কেউই আস্থা ভোটে উপস্থিত ছিলেন না। অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও জোট নেতারা বিদ্রোহীদের মন জয় করতে ব্যর্থ হন। সরকার গঠনের সময় জোট বিধায়কদের সংখ্যা ছিল ১১৮। আস্থা ভোটের পর সেই সংখ্যা কমে হয় ৯৯।

লোকসভা নির্বাচনের পর উজ্জীবিত বিজেপি কর্ণাটকের দিকে প্রথম দৃষ্টি দিয়েছিল। পাশাপাশি কংগ্রেসের ১০ জনকে ভাঙিয়ে গোয়ায় তারা তাদের আসন পাকাপোক্ত করে ফেলেছে। বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া তিন রাজ্যের মধ্যে মধ্য প্রদেশে কংগ্রেসের হাল তেমন সুবিধার নয়। কর্ণাটকের পর বিজেপি এবার ওই রাজ্যে নজর দেবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।