লন্ডন হবে বার্সেলোনার মতো

বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় লন্ডনের আবহাওয়া ২০৫০ সালের মধ্যেই বার্সেলোনার মতো হয়ে যেতে পারে। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের গবেষকেরা এক গবেষণায় এ তথ্য পেয়েছেন। তাঁরা সতর্ক করে বলেছেন, তথ্য বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব লন্ডনের আবহাওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে। ২০০৮ সালে স্পেনের শহরটি যেভাবে প্রচণ্ড খরার মধ্যে পড়েছিল, লন্ডনবাসীদেরও সে অভিজ্ঞতা হবে। দুই কোটির বেশি মানুষকে খাওয়ার পানি জোগাতে গিয়ে দেশটির জনসংখ্যা ও অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

সুইজারল্যান্ডের গবেষকেরা বলছেন, একটি শহরের সঙ্গে আরেকটির তুলনা করলে মানুষের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়টি অনুধাবন করতে সুবিধা হবে।

বুধবার গবেষকেরা সতর্ক করে বলেন, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর এক–পঞ্চমাংশ অজানা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের শিকার হবে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বন্যা ও খরার ঝুঁকিতে পড়বে। ১০ লাখের বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ৫২০টি গুরুত্বপূর্ণ রাজধানী ও নগরের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন তাঁরা। এসব শহরের বৃষ্টিপাত, ঋতু তথ্যসহ বর্তমান আবহাওয়ার সঙ্গে বাড়তি আধা ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়লে কী ফল হবে, তার পূর্বাভাস দিয়েছেন।

ক্রোথারল্যাবের গবেষকেরা বলেন, বিশ্বের ৫২০টি শহরের বিবর্তনের ফলে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। এর মধ্যে কিছু প্রধান নগর অঞ্চল অস্বাভাবিক পরিবর্তনের মুখোমুখি হবে। যুক্তরাজ্যের রাজধানীর আবহাওয়া হয়ে যাবে বার্সেলোনার মতো, এডিনবরা হবে প্যারিসের মতো আর কার্ডিফ হবে মন্টেভিডিওর মতো।

গবেষকেরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুরের মতো ২২ শতাংশ শহরে অবর্ণনীয় পরিস্থিতি তৈরি হবে।

গবেষণা নিবন্ধের প্রধান লেখক জ্যঁ ফ্রাঙ্কোইস বাস্তিন বলেছেন, ‘ইতিহাস আমাদের বারবার দেখায় যে তথ্য-উপাত্তের মতো বিষয়গুলো দেখে মানুষ তাদের বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ড বদলায় না। এ বিষয়টি নিয়ে অনেক প্রতিবেদন তৈরি হলেও তা এর জরুরি অবস্থা তুলে ধরতে পারেনি। ক্রোথার ল্যাবের গবেষকেরা বিষয়টি জনগণের সামনে তাদের জীবদ্দশায় নিজের শহর দিয়ে তুলনা করে দেখাতে চেয়েছি।’

গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, ‘পিএলওএস ওয়ান’ শীর্ষক সাময়িকীতে। ওই নিবন্ধে বলা হয়, ইউরোপে গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল আরও বেশি উষ্ণ হয়ে যাবে। সেখানে ৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত গড় উষ্ণতা বাড়বে।

থম্পসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বাস্তিন বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিবন্যা ও অতিখরার ঝুঁকি তৈরি হবে। এটা অজানা এক পরিস্থিতি।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষ নগরাঞ্চলে বাস করতে পারে। কিন্তু দরিদ্র দেশের অনেক শহরে মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হবে। বস্তির জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মৌলিক সেবাঘাটতির ঝুঁকি তৈরি হবে।

২০১৫ সালের নভেম্বরে ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের ২০০ দেশ অংশ নেয়। কোপ টোয়েন্টিওয়ান নামে পরিচিত ওই সম্মেলনে শিল্পযুগের আগের তুলনায় বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখার ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে বলা হয়েছে, এই শতাব্দীর মধ্যে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হবে। বর্তমান ধারা চলতে থাকলে এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রির নিচে রাখতে পারলে ২০৫০ সাল নাগাদ ১২ ট্রিলিয়ন অর্থনৈতিক ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।

গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, ‘পৃথিবীতে দ্রুত আমাদের জীবনযাপনের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে আমরা আরও বেশি খরা, বন্যা ও মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হব।’

তথ্যসূত্র: রয়টার্স, দ্য সান