ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা বন্ধের আবেদন

নানান ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন অপর্ণা সেন, কৌশিক সেন, অনুরাগ কাশ্যপসহ ৪৯ জন তারকা শিল্পী। ছবি: সংগৃহীত
নানান ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন অপর্ণা সেন, কৌশিক সেন, অনুরাগ কাশ্যপসহ ৪৯ জন তারকা শিল্পী। ছবি: সংগৃহীত

এবার নানান ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি পাঠিয়েছেন কবি, লেখক, সাহিত্যিক, চিত্রপরিচালক, অভিনেতা, শিক্ষাবিদ, গায়কসহ ৪৯ জন তারকা শিল্পী। ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানকে ঘিরে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। আর রামের নামে উন্মাদনা বন্ধের আহ্বানও আছে চিঠিতে।

ভারতের বহু বিশিষ্টজন একাধিক সামাজিক বিষয় উল্লেখ করে গতকাল মঙ্গলবার নরেন্দ্র মোদিকে এ চিঠি লেখেন।

ধর্মের নামে ভারতে যেভাবে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা বাড়ছে তাতে চিন্তিত হয়েই বিদ্বজ্জনেরা এ চিঠি লিখেছেন। তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করে সারা দেশে ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শকে সমুন্নত রাখতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। বিদ্বজ্জনেরা চিঠিতে ভারতের যুগ যুগ ধরে লালিত ধর্মনিরপেক্ষতাকে সমুন্নত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।

জয় শ্রীরাম ধ্বনির প্রভাব থেকে গণপিটুনিসহ নানা ইস্যু চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। দলিত থেকে মুসলিমদের গণপিটুনি, অসহিষ্ণুতার মতো বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে চিঠিতে। সেই সঙ্গে জোর দেওয়া হয়েছে জয় শ্রীরাম স্লোগানের প্রভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতেও যে প্রভাব পড়ছে, পরিস্থিতি দিনকে দিন অশান্ত হচ্ছে—তাও তুলে ধরা হয় চিঠিতে।

৪৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি চিঠিতে সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মোদির প্রতি আরজিও জানিয়েছেন। অভিনেতা পরমব্রতের আহ্বান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধরে রাখা প্রয়োজন। আর অভিনেতা কৌশিক সেন মনে করেন বিদ্বজ্জনেদের সই করা এই চিঠি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক অপর্ণা সেনের মতে, প্রতিবাদের অধিকার থাকা উচিত। গণপিটুনির জন্য কারাদণ্ডের শাস্তি থাকা উচিত ৷ গৌতম ঘোষের মতে, সকলেই শান্তি চাই, কিন্তু চাই না এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের মধ্যে বিবাদ বেঁধে যাক। এগুলো সংবিধানে লেখা নেই ৷

‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানকে ঘিরে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ও রামের নামে উন্মাদনা বন্ধের আহ্বানও আছে চিঠিতে। ছবি: সংগৃহীত
‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানকে ঘিরে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ও রামের নামে উন্মাদনা বন্ধের আহ্বানও আছে চিঠিতে। ছবি: সংগৃহীত

গভীর বেদনা থেকে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং এ থেকে একটা ফলাফল পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা বিশিষ্ট জনদের।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে সই করেছেন ভারতের ৪৯ জন বিদ্বজ্জন। এঁদের মধ্যে আছেন কবি, লেখক, সাহিত্যিক, চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, সমাজসেবী, চিকিৎসক, ভাস্কর, পরিবেশবিদ, চিত্রকর, শিক্ষাবিদ, গায়ক। আছেন চিত্র পরিচালক কেতন মেতে, মণিরত্নম, শ্যাম বেনেগাল, অনুরাগ কাশ্যপ, অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অভিনয়শিল্পী কঙ্কণা সেন শর্মা, সংগীতশিল্পী শুভা মুদগল, অঞ্জন দত্ত, রূপম ইসলাম ও ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ প্রমুখ।

বিদ্বজ্জনেরা মোদি সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে অবিলম্বে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা বন্ধের দাবি তুলে বলেছেন, গণপিটুনি ও ধর্মের নামে যে উন্মাদনা চলছে তা ধর্মনিরপেক্ষ একটি দেশের জন্য কাম্য নয়। ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের ওপর আঘাত স্বরূপ। এ নিয়ে তাঁরা বিশেষ করে দলিত ও মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর যে অত্যাচার এবং গণপিটুনি এবং মারধর চলছে তার জন্য তাঁরা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁরা এই দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা যে বারবার আঘাত খাচ্ছে সে কথাও তুলে ধরেছেন।|

বিবৃতিতে তাঁরা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছেন, গত ২০১৬ সালে দলিতদের ওপর ৮৪০টি অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে। অথচ দোষীদের বিচার হয়েছে এমন নজির নেই। পাশাপাশি আরও কয়েকটি সরকারি সংস্থার পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয়েছে ওই চিঠিতে। তাঁরা এ ব্যাপারে সরকার যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি সে কথাও তুলে ধরেছেন। তাই তাঁরা দাবি করেছেন, এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করতে হবে, দ্রুত ও নিশ্চিত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান আনতে হবে।

মোদির উদ্দেশে বিদ্বজ্জনেরা আরও বলেছেন, ‘জয় শ্রীরাম যেন এখন এক যুদ্ধের হুংকার। এই স্লোগানকে ঘিরে এখন আইনশৃঙ্খলা অবনতি হচ্ছে। আর এই বিশৃঙ্খলা হচ্ছে ধর্মের নামে। এটাতো মধ্যযুগ নয়। রামের নামে এই উন্মাদনা অবিলম্বে বন্ধ করুন।’ বিশিষ্ট জনেরা আরও বলেছেন, বন্ধ করতে হবে দেশদ্রোহী তকমা দেওয়ার প্রবণতাকে। বিজেপির চিন্তাধারার সঙ্গে না মিললে তাঁকে দেশদ্রোহী আখ্যা দেওয়ার প্রবণতাকে রোধ করতে হবে।