বরিসের যত চ্যালেঞ্জ

বরিস জনসন।
বরিস জনসন।

ইরান সংকট দিন দিন বাড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের (ব্রেক্সিট) সংকটও বিস্তৃত হচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল বুধবার বরিস জনসন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যাত্রা শুরু করলেন। এই যাত্রায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বরিসকে।

ব্রেক্সিট নিয়ে অচলাবস্থা এখনো নিরসন হয়নি। এই সংকট সমাধান করতে না পারায় থেরেসা মে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। ফলে বরিসকে প্রথম দিন থেকেই এই ব্রেক্সিটের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বরিস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ব্রেক্সিট প্রশ্নে তিনি ইইউর সঙ্গে পুনরায় দর-কষাকষি করবেন। কিন্তু ইইউর নেতারা পুনঃসমঝোতার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। বরিস এ-ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পিছিয়ে দেওয়ার পর ব্রেক্সিটের জন্য যে ৩১ অক্টোবর তারিখ নির্ধারিত হয়েছে, সেই তারিখেই ব্রেক্সিট সম্পন্ন হবে। প্রয়োজনে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট হবে। বিভক্তিটা এখানেই। কারণ, অধিকাংশ ব্রিটিশ আইনপ্রণেতা চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের বিপক্ষে। কনজারভেটিভ পার্টির আইনপ্রণেতারাও এর মধ্যে রয়েছেন। আর একটি ভালো ব্রেক্সিট সম্পন্ন করার জন্য আইনপ্রণেতারা বরিসকে খুব অল্প ছাড়ই দিচ্ছেন। ফলে ব্রেক্সিট বরিসের জন্য আসলেই একটি চ্যালেঞ্জ।

এদিকে পার্লামেন্টে বরিসের দল কনজারভেটিভ পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। নর্দান আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ক্ষমতায় রয়েছে কনজারভেটিভরা। যেকোনো আইন পাসের জন্য তারা ডিইউপি ওপর নির্ভরশীল। আবার বিরোধী লেবার পার্টির আইনপ্রণেতাদের তোপের মুখে রয়েছেন বরিস। এখানেই শেষ নয়, কাজের ধরন, তাঁর বৈশিষ্ট্য এবং চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের পরিকল্পনার কারণে কনজারভেটিভ পার্টির ইউরোপপন্থী আইনপ্রণেতাদের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্কটা আন্তরিক নয়। ফলে বরিসকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবং সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট হতে পারে পার্লামেন্টে। এসব ভোটের সম্ভাবনা আরও বাড়বে যদি বরিস পার্লামেন্ট স্থগিত করে বা অন্য কোনো উপায়ে চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট সম্পন্ন করতে চান।

যুক্তরাজ্য সরকারে জন্য এটা যে অনেক বড় হুমকি, সেটা বোঝা গেছে থেরেসা মের আমলেই। কনজারভেটিভ পার্টির অনেক আইনপ্রণেতা, এমনকি মের সরকারের মন্ত্রীরাও চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের প্রকাশ্য বিরোধিতা করেছেন। কনজারভেটিভ পার্টির অনেক আইনপ্রণেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন, চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের পদক্ষেপ ঠেকাতে প্রয়োজনে সরকারের পতন ঘটানো হবে।

বরিস এমন সময় ক্ষমতা গ্রহণ করলেন, যখন দেশটির সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। দুই দেশই একে অপরের তেলের ট্যাংকার আটক করেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, তাঁরা তাঁদের জলসীমা রক্ষা করবেন। তবে তাঁরা সংঘর্ষে জড়াতে চান না। মূলত ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার কারণেই যুক্তরাজ্য-ইরান উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ব্রেক্সিট নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে মন্দা যাচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারা গত সপ্তাহেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট হলে দীর্ঘ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও গত মঙ্গলবার বলেছে, বাণিজ্য উত্তেজনা এবং চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের আশঙ্কার কারণে ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনীতি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।