জরুরি নম্বরে ফোন করেও রক্ষা পেল না কিশোরী!

নিহত কিশোরীর স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন করেছে পরিবার। ছবি: এএফপি
নিহত কিশোরীর স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন করেছে পরিবার। ছবি: এএফপি

অপহরণের পর সুযোগ বুঝে সাহায্যের জন্য পুলিশের জরুরি নম্বরে ফোন করেছিল কিশোরী। তাও একবার নয়, তিনবার। শুরুতে পুলিশ বিষয়টিকে আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। যখন পুলিশ ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে পারল, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কিশোরীকে বাঁচানো যায়নি। সাহায্যের জন্য কিশোরীর আবেদনে গুরুত্ব না দেওয়ার ঘটনায় পুলিশপ্রধানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে রোমানিয়ায়।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ১৫ বছরের কিশোরীর মৃত্যু নিয়ে রোমানিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কিশোরীর সাহায্য চাওয়ার ব্যাকুলতা মানুষকে আবেগাপ্লুত করে তুলেছে। ক্ষোভপ্রকাশ করা হয়েছে পুলিশের গাফিলতি নিয়ে। এ অবস্থায় দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলায় মোগা পুলিশপ্রধান ইওয়ান বুদাকে বরখাস্ত করেছেন। মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এ ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপ হিসেবেই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

আলেকজান্দ্রা নামের ওই কিশোরী গত বুধবার অপহরণের শিকার হয়। ধারণা করা হচ্ছে, অপহরণকারীই তাকে হত্যা করেছে। পুলিশ একটি বাড়ি থেকে কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই বাড়ি থেকে ৬৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে আটক করেছে।

কিশোরীর পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে আলেকজান্দ্রার ফোনকে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ করেছে। তবে পুলিশ দাবি করেছে, মেয়েটি কোথায় আছে, তা শনাক্ত করতে পারছিল না তারা।

পুলিশ জানিয়েছে, আলেকজান্দ্রা দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের ক্যারাকাল এলাকার বাসিন্দা। বাড়ি ফেরার জন্য এক ব্যক্তির গাড়িতে লিফট নেওয়ার সময় সে অপহরণের শিকার হয়।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, অপহরণের পরদিন বৃহস্পতিবার আলেকজান্দ্রা পুলিশের জরুরি নম্বর ১১২-তে তিনবার ফোন করে সাহায্য চায়। সে জানায়, গাড়ির চালক তাকে অপহরণ করেছে।

বরখাস্ত হওয়ার আগে পুলিশপ্রধান জানান, ফোনের সংযোগ কাটার আগমুহূর্তে আলেকজান্দ্রা আর্তনাদ করে বলেছিল, ‘সে আসছে, সে আসছে।’

পুলিশ জানিয়েছে, শুরুতে ফোনটি কোন জায়গা থেকে করা হয়েছে, তা খুঁজে পেতে তাদের বেগ পেতে হয়। যে বাড়িটিতে মেয়েটিকে আটকে রাখা হয়েছিল সন্দেহ করা হচ্ছে, সেটির খোঁজ পাওয়া যায় স্থানীয় সময় শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটায়।

এরপর পুলিশ বাড়িটিতে তল্লাশি চালানোর অনুমতি নেয় কর্তৃপক্ষের কাছে। যদিও এ ক্ষেত্রে সেটার আইনি কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। পুলিশ বাড়িটিতে ঢোকার জন্য সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে। অর্থাৎ মেয়েটির শেষ জরুরি ফোন পাওয়ার ১৯ ঘণ্টা পর্যন্ত তারা বাড়িটিতে তল্লাশি চালায়নি।

রোমানিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন জেনারেল প্রসিকিউটর বোগদান লিকু স্থানীয় এক টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, পুলিশ কী কারণে অপেক্ষা করছিল, তা অবশ্যই ব্যাখ্যা করতে হবে। মেয়েটিকে বাঁচানোর সব সম্ভাবনাই ছিল, অথচ তাকে মরতে হলো।