ইমরান-ট্রাম্পের বৈঠকে পাকিস্তানের ৫ জয়

ইমরান-ট্রাম্পের বৈঠক
ইমরান-ট্রাম্পের বৈঠক

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের যুক্তরাষ্ট্র সফর ঘিরে নানা আলোচনা চলছে। সফর থেকে ফেরার পরই পাকিস্তানকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কর্মসূচির প্রযুক্তিগত সহায়তার চুক্তি অনুমোদন করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। একে পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন মোড় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

এ সফর থেকে পাকিস্তান পাঁচটি সাফল্য পেয়েছে বলে দ্য ডিপ্লোম্যাট ডটকমের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়। কয়েক মাস আগেও ইমরানের সফরের কোনো সম্ভাবনা ছিল না, তাই এটিকে পাকিস্তানের কূটনীতির সাফল্য হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকেরা।

ট্রাম্প ও ইমরান খানের বৈঠকে পাকিস্তানের অর্জন নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক উমায়ের জামাল। পাকিস্তানের লাহোরে জন্ম নেওয়া এই সাংবাদিক দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা এবং রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করেন। তাঁর মতে পাকিস্তান যা পেয়েছে, তা হচ্ছে:

প্রথমত, প্রাথমিকভাবে ট্রাম্পের সঙ্গে ইমরান খানের বৈঠকে অনেক আলোচনার মধ্য অন্যতম ছিল আফগানিস্তান ইস্যু। এ ক্ষেত্রে কয়েক মাস ধরেই মার্কিন সরকারের উচ্চপর্যায়ে কর্মকর্তারা পাকিস্তানের ভূমিকার প্রশংসা করতে দেখা গেছে। এ থেকে বোঝা যায় যে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা পাকিস্তানের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টায় অনেকটাই সন্তুষ্ট। তাই সফর শেষে তালেবান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান আলোচনায় ইমরান খান নিজেকে কেন্দ্রীয় খেলোয়াড় হিসেবে হাজির করবেন বলে ধারণা করা যায়।

দ্বিতীয়ত, সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে পাকিস্তানের কোনো কঠোর সমালোচনা এ সফরে করা হয়নি। লক্ষণীয় ব্যাপারটি হলো, সন্ত্রাসবাদ ইস্যুটি সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্বের মধ্যে ওয়াশিংটনের বৈঠকগুলোতে প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠেনি। ইমরান খানও বিভিন্ন ফোরামে আলোচনার সময় বলে দিয়েছেন যে সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে তাঁর দেশের নীতিতে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা এ বিষয়ে একমত যে দেশের ভেতরে জঙ্গিদের আশ্রয় না দেওয়ার সিদ্ধান্তটা পাকিস্তানের স্বার্থেই। এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটন সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে পাকিস্তানের অবস্থানকে সমর্থন করে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।

তৃতীয়ত, ট্রাম্পের কাছ থেকে পাকিস্তান অপ্রত্যাশিত একটি সাফল্য পেয়েছে। তা হলো, কাশ্মীর সংকট নিয়ে ট্রাম্পের আলোচনা এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্য আলোচনার মধ্যস্থতার জন্য তাঁর ইচ্ছা পোষণ। নয়াদিল্লির জন্য এটা নেতিবাচক, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর আলাপের সূত্র ধরে ট্রাম্প বলেন, সেখানে মোদি তাঁকে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যস্থতার অনুরোধ করেছিলেন। ট্রাম্পের এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য ভারত তা অস্বীকার করেছে। ভারত বলেছে, নয়াদিল্লি কাশ্মীর বিষয়ে তৃতীয় পক্ষের কোনো হস্তক্ষেপ গ্রহণ করবে না। মোদির ‘তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার ধারণা’র কথা উল্লেখ করার সম্ভাবনা কম হলেও, ইসলামাবাদ এ বিষয়ে ট্রাম্প ও ইমরানের আলাপের মধ্যে একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য বলে মনে করছে।

চতুর্থত, এই সফর যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং সামরিক সম্পর্ককে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন। আগামী দিনগুলোতে এগুলো আবার শুরুর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বৈঠকে ট্রাম্প বলেছেন, আফগানিস্তান বিষয়ে উভয় দেশ কী অর্জন করবে, তার ওপর নির্ভর করে পাকিস্তান নিরাপত্তা সহায়তা ফিরে পেতে পারে।

কিছুদিন আগে একজন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে শক্তিশালী সামরিক সম্পর্ক বজায় রাখলে মার্কিন স্বার্থ আরও বেশি সুরক্ষিত হবে। সম্ভবত ট্রাম্প আবার পাকিস্তানে সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং অন্যান্য স্থগিত হওয়া কর্মসূচি শুরু করতে পারেন।

সবশেষে, পাকিস্তানের জন্য আরও একটি বড় সাফল্য হলো ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইমরান খান ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছিলেন। এটি ইসলামাবাদ এবং ওয়াশিংটনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রেও খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তদুপরি, ট্রাম্পের সঙ্গে ইমরানের সাম্প্রতিক বৈঠক সম্ভবত উভয় পক্ষের জটিল আমলাতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে হোয়াইট হাউস ও ইমরান খানের অফিসের মধ্যে যোগাযোগে একটি সরাসরি লাইন স্থাপন করতে যাচ্ছে। আশা করা যায় যে আফগান শান্তিপ্রক্রিয়ার অগ্রগতি হলে ট্রাম্পের কার্যালয় ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে। দ্বিপক্ষীয় ক্ষেত্রের অন্য ইস্যুগুলো সমাধানে ইসলামাবাদ এ জাতীয় সুযোগ কাজে লাগাতে চাইতে পারে।

সর্বোপরি, ইমরানের এই সফর ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের কূটনীতিকে গুরুত্বের সুযোগ দিয়েছে, যার পুরো সদ্ব্যবহারই ইসলামাবাদ করতে চাইবে। যদিও পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আগাম মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। কারণ সম্পর্ক সব সময় স্বার্থের ওপর নির্ভর করে। তবে পাকিস্তান যে আপাতদৃষ্টে কিছু একটা বড় জয় পেয়েছে, তা বলাই যায়।