ব্রাজিলের কারাগারে দাঙ্গার নেপথ্যে

আলতামিরার কারাগারে দাঙ্গার ঘটনার পর পুলিশ প্রহরা। ছবি: রয়টার্স
আলতামিরার কারাগারে দাঙ্গার ঘটনার পর পুলিশ প্রহরা। ছবি: রয়টার্স

মাদক ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে ব্রাজিলের কারাগারে দাঙ্গা–হামলার ঘটনাগুলো ঘটেই চলেছে। ধারণক্ষমতার বেশি কয়েদি রাখার কারণে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মতো প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র নেই কারারক্ষীদের। অন্যদিকে, কারাবন্দী মাদক চক্রের সদস্যদের আলাদা জেল কক্ষে রাখতে না পারার কারণে হরহামেশাই ঘটে চলেছে দাঙ্গা।

বিবিসি অনলাইন ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সবশেষ গতকাল সোমবার ব্রাজিলের পারা রাজ্যের আলতামিরা কারাগারে দাঙ্গার ঘটনায় মৃত কয়েদির সংখ্যা বেড়ে ৫৭ হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল সকাল সাতটা থেকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। কারা কক্ষে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ১৬ জনের গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়। অন্যরা ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে মারা গেছে।

পারা রাজ্য সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, অপরাধী চক্র ‘কমান্ডো ক্লাস এ’র (সিসিএ) কারাবন্দীরা প্রতিপক্ষ ‘কমান্ডো ভেরমেলহো’র (রেড কমান্ডের) কারাবন্দীদের কক্ষে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে কয়েকজন কয়েদি ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা যান। এ পর্যায়ের হামলা যে হবে, সে সম্পর্কে কোনো আভাসই পাওয়া যায়নি।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুজন কারারক্ষীকে জিম্মি করেন কয়েদিরা। তবে পরে তাঁদের মুক্ত করে দেওয়া হয়। কারণ, কারারক্ষীদের চেয়ে হামলার লক্ষ্য ছিল প্রতিপক্ষ।

জানা গেছে, আলতামিরা কারাগারের ধারণক্ষমতা ২০০। কিন্তু সেখানে বন্দী রাখা ছিল ৩০৯ জন। তবে কর্তৃপক্ষ ধারণক্ষমতার বাইরে বন্দী রাখার কথা অস্বীকার করেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ব্রাজিলের কারাগারে সহিংসতার ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। কারাগারে বন্দীর সংখ্যার দিক দিয়ে দেশটি বিশ্বে তৃতীয়। দেশটির কারাগারে বন্দীর সংখ্যা সাত লাখ। ধারণক্ষমতার তুলনায় কারাগারগুলোয় বন্দীর সংখ্যা অনেক বেশি।

সাও পাওলোর নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রাফায়েল অলকাদিপানি রয়টার্সকে বলেন, কারাগারগুলোর ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ কারণে কারাগারের ভেতরে এভাবে হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে।

এ বছরের মে মাসে একই দিনে আমাজোনাস রাজ্যের মানায়ুসের চারটি কারাগারে দাঙ্গার ঘটনায় ৪০ জন নিহত হয়। ২০১৭ সালে জানুয়ারিতে ১৩০ জনের বেশি নিহত হয়। দেশটির দুটো বড় অপরাধী চক্রের কারাবন্দীদের মধ্যে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল। সেবারের ঘটনাটি কয়েক দিন ধরে কয়েকটি কারাগারে টানা ঘটে চলেছিল। পরে শত শত কয়েদিকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়।

সহিংসতা ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের কারণে ব্রাজিলের কারাগারে কয়েদির সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। স্থানের তুলনায় কয়েদি বেশি হওয়ায় কারাগার কর্তৃপক্ষের জন্য প্রতিপক্ষ গ্রুপগুলোকে আলাদা করে রাখাও মুশকিল হয়ে পড়ে। এ কারণে কারাগারে প্রতিপক্ষ অপরাধী চক্রের কয়েদিরা একে অন্যের ওপর হামলা চালান। দুটি শক্তিশালী মাদক চক্র সাও পাওলোভিত্তিক ফার্স্ট ক্যাপিটাল কমান্ড (পিসিসি) এবং রিও ডি জেনিরোভিত্তিক রেড কমান্ডের মধ্যে সম্প্রতি সমঝোতা ভেঙে যাওয়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়ে। এই দুই চক্রের বন্দীরা সুযোগ পেলেই একে অন্যের ওপর হামলা করেন। এর ওপর আবার বন্দীর তুলনায় সুযোগ-সুবিধা, যেমন: ম্যাট্রেস ও খাবার কম হওয়ায় সেগুলো পেতে বন্দীদের মধ্যে কাড়াকাড়ি হয়। এসব কারণেও জেলখানায় হরহামেশা উত্তেজনা তৈরি হয়।

অন্যদিকে, ব্রাজিলের কারারক্ষীদের সেভাবে প্রশিক্ষণ নেই, বেতনও কম। ফলে, অত্যধিক বন্দী হওয়ায় তাঁদের সামাল দিতে কারারক্ষীদের হিমশিম খেতে হয়। অন্যদিকে, কয়েদিরা প্রায়ই কারারক্ষীদের ওপর চড়াও হন। এই কয়েদিদের মধ্যে বেশির ভাগই দীর্ঘ সময়ের দণ্ডপ্রাপ্ত। তাই হারানোর কিছু নেই ভাবনা থেকে তাঁরা সহজেই মারমুখী হয়ে ওঠেন।