উন্নাওয়ের ধর্ষণের ঘটনায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ

ভারতের উত্তর প্রদেশের উন্নাওয়ে ধর্ষণের আলোচিত ঘটনায় এবার এগিয়ে এলেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁকে লেখা নির্যাতিতার পরিবারের চিঠি কেন তাঁর হাতে পৌঁছায়নি তা জানানো হোক। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রি বিভাগের প্রতিবেদন তলব করেছেন তিনি।

এর পাশাপাশি গগৈ জানিয়েছেন, উন্নাও ধর্ষণ নিয়ে যে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল, কাল বৃহস্পতিবার তিনি সেই মামলা শুনবেন। ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, ধর্ষণ-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ব্যক্তিরা মামলা গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। মামলাটি উত্তর প্রদেশ থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার আবেদনও সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনাধীন।

ভারতের বৃহত্তম রাজ্য উত্তর প্রদেশের উন্নাওয়ে ২ বছর আগে ১৭ বছরের এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ওই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। ধর্ষণের শিকার নারী অভিযোগ এনেছিলেন রাজ্যের বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারের বিরুদ্ধে। বলেছিলেন, চাকরি চাইতে গেলে বিজেপির বিধায়ক ও তাঁর অনুচরেরা তাঁকে ধর্ষণ করেন। প্রথমে রাজ্য পুলিশ, পরে সিবিআই ওই ঘটনার তদন্ত করছে। দুটি চার্জশিটও দাখিল হয়েছে। তবে মামলার নিষ্পত্তি হয়নি।

বিজেপির নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকে একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। নির্যাতিত নারীর বাবার মৃত্যু হয় পুলিশি হেফাজতে। সুবিচারের দাবিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের বাড়ির সামনে গত বছর ওই নারী আত্মহননের চেষ্টাও করেছিলেন। তিন দিন আগে নিজের দুই মাসি ও আইনজীবীর সঙ্গে সড়কপথে লক্ষ্ণৌ থেকে রায়বেরিলি যাওয়ার সময় এক দুর্ঘটনায় তিনি ও তাঁর আইনজীবী মারাত্মক আহত হন। নিহত হন তাঁর দুই মাসি, যাঁদের একজন ওই ধর্ষণের মামলার সাক্ষী। বিপরীত দিক থেকে আসা এক ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে তাঁদের গাড়ির। সেই ট্রাকের নম্বর প্লেটে কালি লেপা ছিল।
ওই ঘটনার পর উন্নাও-কাণ্ড নিয়ে দেশের রাজনীতি তোলপাড়। অভিযোগ, ধৃত বিজেপি বিধায়ক কারাগারে থেকেও সাক্ষী লোপাটের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পথ দুর্ঘটনা তাঁরই চক্রান্ত। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য জেল থেকে নানাভাবে তিনি চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন।
এই চাপ সৃষ্টি এবং মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ক্রমাগত হুমকির কথাই গত জুলাই মাসে এক চিঠিতে প্রধান বিচারপতিকে জানিয়েছিলেন নির্যাতিত নারীর মা। একই চিঠি দেওয়া হয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট ও উত্তর প্রদেশ সরকারকেও। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সেই চিঠি প্রধান বিচারপতির কাছে পৌঁছায়নি। আজ বুধবার তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘চিঠি লেখার কথা আজই আমি সংবাদপত্রে পড়লাম। কাগজ পড়ে মনে হতে পারে চিঠিটি আমি চেপে গেছি। বাস্তবে কিন্তু তা নয়। মামলাটি উত্তর প্রদেশ থেকে সরিয়ে নেওয়ার আবেদনও সুপ্রিম কোর্টের কাছে জানানো হয়েছিল। আবেদনটি এখনো বিবেচনাধীন।’

যে সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু এবং নির্যাতিতা ও তাঁর আইনজীবী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন, সেই ঘটনায় বিজেপির আরও এক রাজ্য নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তিনি মূল অভিযুক্ত কুলদীপ সিং সেঙ্গারের ঘনিষ্ঠ বিজেপির উন্নাও ব্লক সভাপতি অরুণ সিং। অরুণ সিংয়ের শ্বশুর উত্তর প্রদেশের এক মন্ত্রী। এসব ঘটনায় বিজেপি বেশ অস্বস্তিতে পড়লেও মূল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। তাঁদের দল থেকে বহিষ্কৃতও করা হয়নি।