বেইজিংয়ে খাবারের দোকান থেকে আরবি হরফ মুছে ফেলার নির্দেশ

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে সব ধরনের খাবারের দোকান থেকে হালালসহ সব ধরনের আরবি হরফ মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। কিছু দোকানে আরবি হরফের শব্দ ঢেকে রাখা হয়েছে। বেইজিং, চীন, ১৯ জুলাই। ছবি: রয়টার্স
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে সব ধরনের খাবারের দোকান থেকে হালালসহ সব ধরনের আরবি হরফ মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। কিছু দোকানে আরবি হরফের শব্দ ঢেকে রাখা হয়েছে। বেইজিং, চীন, ১৯ জুলাই। ছবি: রয়টার্স

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে খাবারের দোকান থেকে ‘হালাল’ লেখসহ সব ধরনের আরবি হরফ মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ইসলাম সম্পর্কিত সব ধরনের আরবি হরফ মুছে ফেলার নির্দেশনা সম্প্রতি জারি করেছে দেশটির সরকার। একই সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে এই আদেশ তামিল করতে সংশ্লিষ্টদের বাধ্য করছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বেইজিংয়ের ‘হালাল’ শব্দটি উল্লেখ করে খাবার বিক্রি করা ১১টি রেস্তোরাঁয় এই নির্দেশ জানিয়ে দিয়েছে চীন সরকার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী, এসব খাবারের দোকানে হালালসহ আরবি হরফে কোনো ধরনের লেখা থাকতে পারবে না। এর মধ্যে বেইজিংয়ের একটি নুডলস বিক্রেতাকে ‘হালাল’ শব্দ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন সরকারি কর্মকর্তারা। এই কর্মকর্তারা নিজেরা ওই দোকানে উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ‘হালাল’ শব্দটি মুছতে বলেন। ওই দোকানের ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশি সংস্কৃতি বর্জন করে চীনা সংস্কৃতির ব্যবহার বাড়াতে বলেছেন। তবে এই দোকানিরা কেউই নাম প্রকাশে রাজি হননি। কিছু দোকানে আরবি হরফের শব্দ ঢেকে রাখা হয়েছে।

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে কমপক্ষে এক হাজার হালাল দোকান ও রেস্তোরাঁ আছে। তবে বেইজিংয়ের সব দোকান ও রেস্তোরাঁকেই আরবি হরফ সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কিনা, তা সরকারের তরফে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রয়টার্সের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হালাল খাবার বিক্রির বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় আরবি হরফে ‘হালাল’ লেখা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এর বদলে চীনা মান্দারিন ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে।

তবে আরবি হরফ সরিয়ে ফেলার এই অভিযান চীনে নতুন নয়। ২০১৬ সাল থেকে এই অভিযান গতি পায়। এর পর থেকে চীনজুড়ে মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি নির্ভর বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। দেশজুড়ে অনেক মসজিদের গম্বুজ সরিয়ে ফেলেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এর পরিবর্তে চীনা রীতির প্যাগোডা নির্মাণকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

চীনে প্রায় ২ কোটি মুসলিমের বাস। আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটি মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা দিয়ে থাকে। তবে সমালোচকদের মতে, ক্ষমতাসীন সমাজতান্ত্রিক আদর্শের রাজনৈতিক দলের নীতির সঙ্গে এটি সাংঘর্ষিক। দেশটিতে যে শুধু মুসলমানদের নিরীক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে তা নয়। একই সঙ্গে অসংখ্য খ্রিষ্টান চার্চকেও অবৈধ ঘোষণা করেছে সরকার।

গত ২০০৯ সালে মুসলিম ধর্মাবলম্বী উইঘুর সম্প্রদায়ের মানুষ চীনা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল। এ সময় জিনজিয়াং প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভকে ‘সন্ত্রাসী তৎপরতা’ আখ্যা দিয়ে স্থানীয় পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় চালায়। তখন বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও পশ্চিমা দেশগুলো বলেছিল, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নামে চীন সরকার সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালিয়েছিল। এর পর থেকে উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকজনদের গণগ্রেপ্তার এবং ব্যাপক নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।

চীনা সরকারের দাবি, ধর্মীয় চরমপন্থা ঠেকানোর জন্যই জিনজিয়াংয়ে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনা সরকার দেশটিতে বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাব কমাতে চায়। এ জন্যই আরবি হরফ সরিয়ে ফেলাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর পরিবর্তে চীনা সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

এদিকে উইঘুর সম্প্রদায়ের মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি চীনের ‘অন্যায়’ আচরণের প্রতিবাদ করে আসছে বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী ও কিছু পশ্চিমা দেশ। তবে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া বলছে, সম্প্রতি এর প্রতিক্রিয়ায় তিরিশটিরও বেশি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে চীনের প্রশংসা করেছে। এসব দেশের তালিকায় আছে পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আলজেরিয়া, কাতার, ফিলিপাইনসহ এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ। এই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মানবাধিকার রক্ষায় চীনের অর্জন প্রশংসাযোগ্য। উন্নয়নের মধ্য দিয়েই মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টিকে উৎসাহিত করছে চীন।