জারিফের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে শিশুসুলভ বললেন রুহানি

প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ। ছবি: রয়টার্সের ফাইল ছবি।
প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ। ছবি: রয়টার্সের ফাইল ছবি।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের ওপর ওয়াশিংটন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আর এই চাপিয়ে দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে ‘শিশুসুলভ আচরণ’ বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। দুদেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা এতে আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা।

আজ বৃহস্পতিবার এক বক্তব্যে হাসান রুহানি জানান, ইরানকে ভয় পেয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

গতকাল বুধবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর কোনো সম্পদ বা স্বার্থ থাকলে তা জব্দ করা হবে। তবে জারিফ জানিয়েছেন, ওখানে তাঁর কিছুই নেই।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি প্রচারিত এক বার্তায় রুহানি বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) শিশুসুলভ আচরণ করছে। তারা প্রতিদিন দাবি করছিল, আমরা বিনা শর্তে আলোচনায় বসতে চাই। আর তাঁর ঠিক পরপরই আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিল।’

২০১৫ সালে হওয়া ছয় জাতি পারমাণবিক চুক্তি থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার কারণ হিসেবে ট্রাম্প বলেছিলেন, আগের চুক্তিটি ইরানের পক্ষে যায়, যা তেহরানকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে ও মধ্যপ্রাচ্যে অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার পরোক্ষ স্বাধীনতা দেয়।

ট্রাম্প ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করেন, যাতে দেশটি আলোচনার টেবিলে ফিরে আসে। এই উত্তেজনা যুদ্ধের রূপ নিতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করলেও যুক্তরাষ্ট্র তার পথ থেকে ফিরে আসেনি। ইরানও ক্রমে শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে। কারণ, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রতারিত হয়েছে বলে মনে করছে। একই সঙ্গে ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে বলে জানিয়েছেন ইরানের চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ আয়াতুল্লাহ খামেনি। বিশেষ করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে তেহরানের তেল রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছে ইরান।

গত মে ও জুন মাসে উপসাগরীয় অঞ্চলে তেলবাহী ছয়টি ট্যাংকারে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার জন্য ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র; যদিও তেহরান সব সময় এই অভিযোগ নাকচ করে আসছে। এ বিষয় নিয়ে কথার লড়াই চলতে থাকে দুই পক্ষের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে গত ২০ জুন ইরান জানায়, আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় হরমুজ প্রণালিতে তারা গুলি করে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করেছে। পরে বিষয়টি স্বীকারও করে যুক্তরাষ্ট্র। সঙ্গে অভিযোগ করে, এর আগের সপ্তাহেও ইরান মার্কিন একটি ড্রোনকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা যেকোনো সময় যুদ্ধে রূপ নেওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

জুলাই মাসে নিউইয়র্ক সফরকালে জাতিসংঘের একটি সভায় মার্কিন সংবাদমাধ্যমের কাছে দেওয়া জারিফের অসংখ্য সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ করে রুহানি বলেন, ‘যে দেশটি নিজেদের শক্তিধর মনে করে, নিজেদের বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি দাবি করে, তারাই কি না আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারে ভয় পেয়েছে।’ তিনি জানান, ‘জারিফ যখন নিউইয়র্কে সাক্ষাৎকার দেন, তখন মার্কিনরা বলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি তাঁদের জনমতকে বিভ্রান্ত করছেন। তাঁদের মুক্তচিন্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের দাবির কী হয়েছে?’

রুহানি বলেন, ‘হোয়াইট হাউসের প্রতিটি স্তম্ভ এক জ্ঞানী, আত্মত্যাগকারী কূটনীতিকের কথায় আর যুক্তিতে কেঁপে উঠেছে।’

সান ফ্রান্সিসকো এবং ডেনভারে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্র হিসেবে ১৭ বছর বয়স থেকে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন জারিফ। ২০০২-০৭ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্কে ইরানি রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন তিনি।