চাপে ইমরান, নান-রুটির দাম কমিয়ে বাড়ালেন জ্বালানি তেলের দাম

পাকিস্তানে সম্প্রতি রুটি ও নানে দাম বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু জনগণের চাপের মুখে রুটি ও নানের দাম কমানো হলো। তবে রুটি ও নানের দাম কমালেও বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম।

আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ পাকিস্তানের। তাই বিপাকে পড়ে রুটির দামও বাড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু সাধারণ মানুষের চাপে আবার সেই কমাতে বাধ্য হলো ইমরান খান সরকার। পাকিস্তানে অন্যতম প্রধান খাবার রুটি ও নান।

পিটিআই, ডন ও খালিজ টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, নান ও রুটির দাম আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বর্তমানে দেশটির বিভিন্ন শহরে নান বিক্রি হয় ১২ থেকে ১৫ রুপিতে। গ্যাসের শুল্ক ও আটার দাম বৃদ্ধির আগে এ দাম ছিল ৮ থেকে ১০ রুপি। বর্তমানে রুটির মূল্য ১০ থেকে ১২ রুপি। আগে এর দাম ছিল ৭ থেকে ৮ রুপি। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের এক বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় সারা দেশে আগের দামে বিক্রি করতে হবে নান ও রুটি। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী ড. ফেরদৌস আশিক আওয়ান সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান। এরপরই এক ধাপে বাড়ানো হয় জ্বালানি তেলের দাম।

এক ধাক্কায় তেলের দাম লিটার প্রতি পাঁচ রুপি করে বাড়ানো হয়েছে। পেট্রলের দাম লিটার প্রতি বেড়েছে ৫.১৫ রুপি। এর ফলে পেট্রলের বর্তমান দাম হয়েছে ১১৭.৮৩ রুপি। হাই স্পিড ডিজেলের দাম বেড়েছে ৫.৬৫ রুপি। কেরোসিনের দাম বেড়েছে ৫.৩৮ রুপি ও লাইট ডিজেলের দাম বেড়েছে ৮.৯ রুপি।

ফেরদৌস আশিক আওয়ান বলেন, মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বিভিন্ন ইস্যু ছাড়াও গ্যাসের শুল্ক বৃদ্ধি, নান ও রুটির মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

রুপির মান কমে যাওয়া ও মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হিমশিম খাচ্ছে পাকিস্তানের সাধারণ লোকজন। ইমরান খান গত বছরের ২৫ জুলাইয়ে ক্ষমতায় আসার পরপরই পাকিস্তানি মুদ্রা রুপির মূল্য ৩০ শতাংশ কমে যায়। মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ শতাংশ। ধারণা করা যাচ্ছে, এটা আরও বাড়বে।

বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, পাকিস্তানের জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এর হার কমাতে হবে। এ বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৪ শতাংশে নামাতে হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সবশেষ ৬০০ কোটি ডলার ঋণ মঞ্জুর করলেও দেশটিতে স্বল্পমেয়াদি কোনো কার্যক্রম নেওয়া হয়নি। আইএমএফের সঙ্গে পাকিস্তানের সুসম্পর্ক রয়েছে। এর আগেও অনেকবার আইএমএফ সংকটের মুখে পাকিস্তানকে সহায়তা দিয়েছে। আইএমএফের দ্বারস্থ যাওয়ার আগে ইমরান খান চীন, সৌদি আরবসহ ‘বন্ধুদেশগুলোর’ কাছ থেকে শত কোটি ডলার ঋণ ও বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু এরপরও তা দেশটির জন্য যথেষ্ট নয়।

পাকিস্তানিরা দৃশ্যত অর্থনৈতিক চক্রের অন্তহীন করাল দর্শনে পড়েছে। কৃচ্ছ্র সাধনার দায় পড়েছে লাখ লাখ দরিদ্র মানুষের ওপর। গভীরে প্রোথিত কাঠামোগত সংস্কারের দাবি এখন অন্তঃসারশূন্যে পরিণত হয়েছে। এ মাসের শুরুতে ব্যবসায়ীরা এক দিনের ধর্মঘট পালন করেছেন। গত শুক্রবার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাওয়ালপিন্ডি শহরের দিকে আট হাজার মানুষের পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়।