এ লড়াইয়ে ইরানই জয়ী হবে: রুহানি

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ছবি: এএফপি
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্র নাম প্রত্যাহারের পরও পারমাণবিক চুক্তি রক্ষা করতে লড়াইয়ের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে ইরান। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, বিশ্ব পরাশক্তির সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিকে ভরাডুবি থেকে বাঁচাতে লড়াইয়ের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ইরান। তিনি নিশ্চিত, এ লড়াইয়ে ইরানই জয়ী হবে।

রুহানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ভাষণে বলেছেন, ‘আমাদের সামনে কঠিন যুদ্ধ, আমরা নিশ্চিতভাবে জয়ী হব।’

আজ শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের অর্থনীতি তেল সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। এই জায়গাতে আঘাত করেই যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে গুরুতর অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে ইরান। প্রতিশোধ হিসেবে ইরান চুক্তি ভঙ্গ করে ইউরেনিয়াম উৎপাদনের সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে। পশ্চিমারা অ্যাটম বোমা তৈরিতে এই ইউরেনিয়াম ব্যবহারের আশঙ্কা প্রকাশ করে থাকে।

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয়টি দেশের করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র গত বছর নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। পরে দেশটি ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ওই ঘটনা থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পারমাণবিক চুক্তিতে সই করা অন্য পাঁচটি দেশ যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীনের হস্তক্ষেপ চায় ইরান। ইরান মার্কিন স্বার্থে হামলা করতে পারে, নিজ দেশের এমন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত মাসে ইরানকে লক্ষ্য করে মধ্যপ্রাচ্যে রণসাজে সজ্জিত হয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে গত মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চারটি ট্যাংকারে হামলা এবং জুন মাসে ওমান উপসাগরীয় এলাকায় জাপান ও নরওয়ের মালিকানাধীন দুটি তেলবাহী ট্যাংকারে হামলার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে মধ্যপ্রাচ্যে আরও এক হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সামরিক ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় পরদিন ইরানে পাল্টা হামলা চালানোর সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করেন ট্রাম্প। সবশেষ ইরানের একটি ট্যাংকার জব্দের জের ধরে গত মাসে হরমুজ প্রণালিতে ইরান ব্রিটিশ ট্যাংকার জব্দ করলে এই দুই দেশের মধ্যেও উত্তেজনা দেখা দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের চলমান নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইরান এখন অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। ২০১৫ সালে ছয়টি পরাশক্তির সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি অনুসারে ইরান পারমাণবিক উন্নয়ন কর্মসূচি কমিয়ে আনে। দেশটি ইউরেনিয়াম সীমিত রাখার ব্যাপারেও সম্মত হয়। ইউরেনিয়াম পারমাণবিক চুল্লি ও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এসব পদক্ষেপের বিনিময়ে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এসব দেশ। তবে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর মিত্রদেশগুলোকেও ইরান থেকে তেল কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চাপ দেয়। অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে চুক্তি ভঙ্গ করে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানোর হুমকি দেয় ইরান।

গতকাল ভাষণে রুহানি বলেন, ‘চুক্তি ও আলোচনার মাধ্যমে আমরা ফলাফল পাব, এই অনুমানের ওপর নির্ভর হয়ে আমরা কাজ করছি না।’ ইউরোপীয় শক্তির কথা উল্লেখ করে রুহানি বলেন, ইরানকে আধুনিক পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে ওই চুক্তির মাধ্যমে বিরত রাখা হলেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিনিময়ে তারা (পরাশক্তি) যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা থেকে ইরানকে রক্ষা করতে পারছে না।
ভাষণে রুহানির হতাশাই ফুটে ওঠে। ২০১৫ সালের চুক্তির প্রধান উদ্যোক্তা এবং সমঝোতার শক্তিশালী এই প্রবক্তা আভাস দেন যে চুক্তিটিকে পুরোপুরি শেষ হওয়া থেকে বাঁচাতে তিনি আশা হারাচ্ছেন। যদিও তিনি ইউরোপের সঙ্গে যোগাযোগের দরজা এখনো খোলা রেখেছেন।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, ‘আমরা কোনো ফলাফল পাব না—এটা ধরেই নিয়ে পরিকল্পনা করছি। এ বছর এবং পরের বছরের জন্য আমাদের বাজেট, আমাদের মন্ত্রণালয়গুলোও এর ওপর ভিত্তি করে কাজ করছে। দীর্ঘমেয়াদি দূরদর্শিতার সঙ্গে আমরা কাজ করছি এবং একের পর এক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি।’