কাশ্মীর নিয়ে তুমুল জল্পনা, শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের চন্দনওয়ারী এলাকায়  ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছেন হিন্দু পুণ্যার্থীরা। জায়গাটি শ্রীনগর থেকে ১১৬ কিলোমিটার দূরে। ২৭ জুলই, ২০১৯। ছবি: এএফপি
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের চন্দনওয়ারী এলাকায় ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছেন হিন্দু পুণ্যার্থীরা। জায়গাটি শ্রীনগর থেকে ১১৬ কিলোমিটার দূরে। ২৭ জুলই, ২০১৯। ছবি: এএফপি

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর নিয়ে তুমুল জল্পনার মধ্যে নিরাপত্তাসংক্রান্ত বৈঠক সারলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ রোববার সেই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডেকেছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাপ্রধান অরবিন্দ কুমার, রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইংয়ের (র) সামন্ত গোয়েল এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গউবাকে। বৈঠক নিয়ে সরকারিভাবে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া না হলেও এটা স্পষ্ট, কাশ্মীর পরিস্থিতিই ছিল আলোচনার মুখ্য বিষয়।

বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী, অমরনাথ যাত্রীদের কীভাবে নিরাপদে দ্রুত ফিরিয়ে আনা যায়, অন্য বিষয়ের মধ্যে তা আলোচিত হয়। শোনা যাচ্ছে, সংসদের অধিবেশন শেষ হলে অমিত শাহ দু-তিন দিনের জন্য কাশ্মীর যাবেন।

কাশ্মীর নিয়ে হঠাৎই শুরু হয়েছে দেশজোড়া জল্পনা। একই সঙ্গে সর্বস্তরে বেড়ে চলেছে উৎকণ্ঠা। কয়েক দিন ধরে সরকারি কিছু সিদ্ধান্ত, প্রশাসনিক কিছু ব্যবস্থা এই উৎকণ্ঠা ও জল্পনা বাড়িয়ে তুলেছে। উঠে গেছে নানাবিধ প্রশ্ন ও সংশয়।

গত সপ্তাহে একেবারে আচমকাই বন্ধ করে দেওয়া হয় আমরনাথ যাত্রা। প্রতিবছর আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে অমরনাথ যাত্রাকে কেন্দ্র করে গোটা উপত্যকা মেতে থাকে। লাখো হিন্দু পুণ্যার্থী জড়ো হন। উপত্যকার অর্থনীতির একটা বড় অংশ এই যাত্রার ওপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটা সত্ত্বেও প্রশাসনিক নির্দেশে গত সপ্তাহের শুক্রবার বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই যাত্রা। নির্দেশ দেওয়া হয় যাত্রীদের অবিলম্বে উপত্যকা ছেড়ে চলে যাওয়ার। ১৯৯০ সাল থেকে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী উৎপাত শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম অমরনাথ যাত্রা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হলো।

সরকারি সূত্রে এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে সন্ত্রাসবাদীদের নাশকতার আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু অন্য দেশি-বিদেশি পর্যটকদেরও কেন অবিলম্বে চলে যেতে বলা হয়েছে, কেনই বা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভিন রাজ্যের পড়ুয়াদের রাজ্য ছাড়তে বলা হয়েছে, তার কোনো সদুত্তর সরকার বা প্রশাসন দিতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে আরও ১০ হাজার আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানকে নিরাপত্তার কাজে উপত্যকায় নিযুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে মোট বাড়তি বাহিনীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার। বাড়ানো হয়েছে টহল ও তল্লাশি। সংগত কারণেই সবার মনে প্রশ্ন জাগছে, কেন এই সাবধানতা, কী কারণে এই তৎপরতা, এত সাজ সাজ রব?
উপত্যকার রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষজনের আশঙ্কা, সংসদের উভয় কক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত বিল পাস করাতে সরকারি সাফল্য শাসক দলকে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে উৎসাহিত করে তুলেছে। কয়েকটা সম্ভাবনার বিষয় নিয়ে চর্চা চলছে। যেমন, সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫(ক) ধারার বিলোপ। এই দুই ধারা জম্মু-কাশ্মীরকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে। অন্য রাজ্যগুলো থেকে পৃথক করেছে। দুটি ধারাই বাতিল করা বিজেপির বহুদিনের প্রতিশ্রুতি ও নির্বাচনী অঙ্গীকার। অন্য চর্চা জম্মু ও কাশ্মীরকে পৃথক রাজ্য ঘোষণাসংক্রান্ত। এই দাবিও বিজেপিতে দীর্ঘকালের। তৃতীয় চর্চা স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের ছক বানচাল করে দেওয়া নিয়ে। এমন মনে করা হচ্ছে, ১৫ আগস্ট শ্রীনগরের লালচক থেকে হয়তো এমন কিছু ঘোষণা করা হতে পারে। তার আগে সাবধানতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এসব সতর্কতা ও যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা।

সেনা ও গোয়েন্দা সূত্রের খবর অবশ্য এই তৎপরতা সন্ত্রাসবাদী চক্রান্ত রুখতে। জুলাই মাসের শেষাশেষি নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে অনুপ্রবেশের একাধিক ঘটনা সেনাবাহিনী বানচাল করে দেয়। শনিবার পাকিস্তানের বর্ডার অ্যাকশন টিমের (ব্যাট) ৫ সদস্য কেরান সেক্টরে ঢুকে পড়লে ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। মরদেহের শেষকৃত্যের জন্য ফেরত নিতে পাকিস্তানকে বলা হয়। পাকিস্তান অবশ্য তাতে সাড়া দেয়নি। বরং তারা ভারতের বিরুদ্ধে ‘ক্লাস্টার বম্বিংয়ের’ অভিযোগ এনে বলে, কাশ্মীর পরিস্থিতি থেকে নজর ঘোরানোর এটা একটা ছক। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রোববার টুইট করে ওই ‘হামলার’ নিন্দা করেন। জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিও তিনি জানান। ভারতীয় সেনা সূত্রের খবর, কেরান সেক্টরে গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে।