যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করলে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে চীন

যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করলে চীন পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করলে চীন পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় মাঝারি মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করলে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে বলে হুমকি দিয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশগুলো ওই সব ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের অনুমতি দিলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছে চীন।

গত শনিবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপের বলেছিলেন, এই অঞ্চলে এক মাসের মধ্যে মাঝারি মাত্রার ভূমিভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিক্রিয়ায় আজ মঙ্গলবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিভাগের মহাপরিচালক ফু কং এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে করা মাঝারি মাত্রার পারমাণবিক শক্তি চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয়। ওই চুক্তির আওতায় ৫০০ থেকে ৫০০০ কিলোমিটার দূরত্বের ভূমিভিত্তিক পারমাণবিক ও গতানুগতিক ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ নিষিদ্ধ ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে, রাশিয়া ওই চুক্তি মেনে চলছিল না। ওই চুক্তিতে চীনকে অংশ নিতে বলা হলেও তারা রাজি হয়নি। তবে ওই চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন চীনকে ঠেকাতে নতুন প্রযুক্তির অস্ত্র তৈরি করতে পারবে।

এদিকে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের প্রতিক্রিয়ায় চীনের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিভাগের মহাপরিচালক ফু কং বলেন, এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের দিকে নজর রাখবে চীন এবং চুপচাপ বসে থাকবে না। তিনি বলেন, ‘চীনের দোরগোড়ায় এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করলে চীন পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। এর পরিণামের কথা ভেবে কাজ করতে প্রতিবেশীদের জোর আহ্বান জানাচ্ছি। তারা যেন তাদের ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের মাঝারি মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে না দেয়।’ এ ক্ষেত্রে তিনি জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার নাম উল্লেখ করে সতর্ক করে বলেন, এতে তাদের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ হাসিল হবে না।

তবে ফু কং এটা জানাননি যে চীন ঠিক কীভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের অনুমতি দিলে যা করার তা আলোচনা সাপেক্ষেই করা হবে। তিনি আরও জানান, ক্ষেপণাস্ত্রের মতো অস্ত্রের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে নতুন কোনো শর্তের ব্যাপারে ত্রিপক্ষীয় কোনো আলোচনায় অংশ নেওয়ার ইচ্ছে নেই চীনের। তিনি দাবি করেন, চীনের বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত করার মতো দূরত্ব অতিক্রমে সক্ষম নয়।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপেরসহ ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, চীনের মারমুখী আচরণ ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অস্থিতশীলতা তৈরি করছে।

এশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন ইস্যুতে বাগ্‌যুদ্ধ এই অঞ্চলের অস্ত্রদৌড় নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা শুরুর আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র। আর নভেম্বরে মাঝারি মাত্রার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার লক্ষ্য রয়েছে পেন্টাগনের।

এদিকে চীন জ্বালানিসমৃদ্ধ দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ এলাকায় তৈরি কৃত্রিম দ্বীপে বিপুল পরিমাণে নিজেদের মাঝারি মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে এবং সামরিক সরঞ্জাম স্থাপন করেছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সীমিত বলে জানিয়েছেন পেন্টাগন কর্মকর্তারা। চীনকে ঠেকাতে তাই নতুন অস্ত্র ও কৌশল নির্ধারণ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।