ভারতের দূতকে বহিষ্কার করেছে পাকিস্তান, বাণিজ্যও স্থগিত

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বে আজ বুধবার জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভাতেই দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বে আজ বুধবার জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভাতেই দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনারকে বহিষ্কার করেছে ইসলামাবাদ। একই সঙ্গে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত নিজেদের হাইকমিশনারকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইমরান খানের সরকার। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে সব ধরনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য স্থগিত ঘোষণা করেছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন-এর খবরে বলা হয়েছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বে আজ বুধবার জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভাতেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মূলত কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করতে পাকিস্তানের নিজেদের সব ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা সক্রিয় করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

ওই সভার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশী এআরওয়াই নিউজকে বলেছেন, ‘আমাদের কূটনীতিকেরা আর নয়দিল্লিতে থাকবেন না। ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিকদেরও ফেরত পাঠানো হবে।’ সভায় পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা, মানবাধিকার প্রভৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দেশটির সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরের বিষয়ে ভারত সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় পাঁচ দফা পরিকল্পনা নিয়েছে ইসলামাবাদ। এক টুইট বার্তায় এর বিস্তারিত জানিয়েছে ইমরান খানের সরকার। তাতে বলা হয়েছে, ১. ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক নিম্নমুখী করা, ২. ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিত, ৩. দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন চুক্তিগুলো নতুন করে পর্যালোচনা ৪. জাতিসংঘে কাশ্মীর ইস্যু উত্থাপন এবং ৫. কাশ্মীরি জনগণের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আসন্ন স্বাধীনতা দিবস (১৪ আগস্ট) উদযাপন করা।

এর আগে জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করার ভারতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তাঁর মতে, ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে পৃথক করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করে ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। এর মাধ্যমে জাতিগত নিধন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

নরেন্দ্র মোদির সরকার বাতিল করে দিয়েছে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা। এই ধারায় জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। পররাষ্ট্র, যোগাযোগ ও প্রতিরক্ষা ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ওই রাজ্যকে দেওয়া হয়েছিল। তাদের আলাদা পতাকা ছিল। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আলাদা সংবিধান ছিল। কালে কালে সব হারিয়ে অবশিষ্ট ছিল সাংবিধানিক ধারা ও কিছু বিশেষ ক্ষমতা। এবার সেটাও নিয়ে নেওয়া হলো। এ ছাড়া জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দুই টুকরোও করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য থেকে লাদাখকে বের করে তৈরি করা হয়েছে নতুন এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যার কোনো বিধানসভা থাকবে না। জম্মু-কাশ্মীরের পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে তার পরিচিতি হবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে।