জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া বিরোধ সংস্কৃতি অঙ্গনেও

জাপানের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য নিয়ে সংঘাতের শুরুটা হয়েছে হঠাৎ করেই। গত জুন মাসের শেষে জাপানের ওসাকা শহরে জি–২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়ে যাওয়ার ঠিক পরপর দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি হওয়া উচ্চ প্রযুক্তির কিছু পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ঘোষণা এসেছিল। জাপানের পক্ষ থেকে প্রচার করা হয়েছিল, দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়াবলি বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, টোকিওর সিদ্ধান্ত মুক্তবাজার নীতিমালার নগ্ন লঙ্ঘন। তবে জাপান এতে পিছপা হয়নি। পরবর্তী সময়ে জাপান সরকার অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যসুবিধা ভোগ করা রাষ্ট্রের তালিকা থেকে দক্ষিণ কোরিয়াকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে, দুই দেশের বাণিজ্যসংঘাত এখন উত্তপ্ত। দুই দেশের মধ্যেকার সংঘাত এখন সংস্কৃতি অঙ্গনেও ছড়িয়ে পড়েছে।

জাপানের এমন সিদ্ধান্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপক অসন্তোষের জন্ম দেয়। এতে দেশের নাগরিকদের মধ্যে জাপানবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার রাজনীতিবিদেরা বিষয়টিকে পুঁজি করে মাঠ গরম করছেন। জাপানও এর ব্যতিক্রম নয়।

জাপানের আইচি জেলার নাগোইয়া শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আইচি ট্রিয়েনালে নামে পরিচিত শিল্পকলার প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর একটি অংশ নিবেদিত ছিল নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকা পড়ে যাওয়া কিছু শিল্পকর্মের জন্য। সেই অংশের প্রদর্শনীর জন্য আয়োজকেরা ২০টি শিল্পকর্ম সংগ্রহ করেছিলেন। জাপানের অন্যান্য জাদুঘর কিংবা প্রদর্শনীতে এগুলো দেখানো সম্ভব হয়নি। এই আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন।

এ সপ্তাহের শুরুতে আইচির জেলা গভর্নর প্রদর্শনীর আয়োজনে দেখা দেওয়া নিরাপত্তাহুমকির দৃষ্টান্ত তুলে ধরে ট্রিয়েনালের সেই অংশ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। প্রদর্শনী শুরু হওয়ার সময় থেকেই, বিশেষ করে একটি শিল্পকর্ম নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। সেই শিল্পকর্মটি হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্পীর একটি ভাস্কর্য। কমফোর্ট উইমেন নামে পরিচিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় জাপানি সৈন্যদের যৌনক্ষুধা মেটানোর জন্য নিয়োগ করা নারীদের প্রতীক হিসেবে চেয়ারে উপবিষ্ট এক বালিকা সেখানে ঠাঁই পেয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানীর সাবেক জাপানি দূতাবাসের সামনে ঠিক সে রকম একটি মূর্তি বসানো থাকায় জাপানের জাতীয়তাবাদীরা প্রদর্শনীতে সে রকম কিছু একটার জায়গা করে নেওয়া নিয়ে শুরু থেকেই উষ্মা প্রকাশ করে আসছিলেন। এঁদের কয়েকজন আবার প্রদর্শনী কক্ষ জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ই-মেইল ও ফ্যাক্স বার্তা আয়োজকদের কাছে পাঠায়। ফলে, আইচির গভর্নর নাগরিক জীবনের সামনে হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে মনে করে প্রদর্শনীর পুরো সেই অংশ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার পাশাপাশি জাপানেও অনেকেই এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করে বক্তব্য দিয়েছেন। এরপরও বিষয়টি নিয়ে নতুন করে সংকট সৃষ্টি হওয়ার পথ বন্ধ হয়নি।

আইচি ট্রিয়েনালে অংশ নেওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার অন্য দুই শিল্পী গত মঙ্গলবার আয়োজকদের কাছে লেখা চিঠিতে অনুরোধ করেছেন, তাঁদের শিল্পকর্ম যেন প্রদর্শনী কক্ষ থেকে নামিয়ে নেওয়া হয়। সেই দুই শিল্পী লিম মিন-ওক এবং পাক চাং-কিওংয়ের জমা দেওয়া শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর জন্য বেছে নেওয়া শিল্পকর্মের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল। লিম এক বিবৃতিতে বলেছেন, সেন্সর ব্যবস্থাকে কার্যকর হতে দেখে কোনো শিল্পীর পক্ষেই চুপ করে বসে থাকা সম্ভব নয়।