পশ্চিমবঙ্গে ফের কাছাকাছি আসছে কংগ্রেস-সিপিএম!

কংগ্রেস রাজ্য সভাপতি সোমেন মিত্র এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
কংগ্রেস রাজ্য সভাপতি সোমেন মিত্র এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের লোকসভা নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কংগ্রেস ও সিপিএমকে এবার নতুন শিক্ষা দিয়েছে। বুঝিয়ে দিয়েছে, তাদের পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। শক্ত হচ্ছে বিজেপির মাটি। আর আলগা হচ্ছে তৃণমূলের মাটি। লোকসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বিজেপি ও তৃণমূলকে ঠেকাতে কংগ্রেস ও সিপিএম জোট বেঁধে নির্বাচনের কথা ভাবছে। এ বছর বিধানসভার তিনটি আসনের উপনির্বাচনে আসন সমঝোতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই দল।

এবার লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল নতুন করে হিসাব কষতে শিখিয়েছে দলগুলোকে। যেখানে বিজেপি এই রাজ্যে দুটি আসনের মালিক ছিল, সেখানে তারা কেড়ে নিয়েছে ৪২ আসনের মধ্যে ১৮টি আসন। আবার কংগ্রেসের যেখানে ৪টি আসন ছিল, সেখানে তারা পেয়েছে দুটি আসন। আর সিপিএমের দুটি আসন ছিল, এখন শূন্য হয়ে গেছে। তাই এই ফলাফল কংগ্রেস-সিপিএমকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, তৃণমূল-বিজেপিকে রুখতে হলে ধর্মনিরপেক্ষ কংগ্রেস ও সিপিএমকে ফের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাদের বিজেপি-তৃণমূল, এই দুই শক্তির বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়তে হবে।

কংগ্রেস ও সিপিএম এই সোজা অঙ্কটি আগেই বুঝতে পেরে এবারে লোকসভা নির্বাচনের আগে এক জোট হয়েছিল। মোটামুটি আসন ভাগাভাগি হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কংগ্রেস-সিপিএমের নির্বাচনী জোট ভেঙে যায়। প্রথম সমস্যা দাঁড়ায় উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ আসন নিয়ে। এই আসনে ২০১৪ সালে জিতেছিল সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম। নির্বাচনী সমঝোতা হলে এই আসনটি সিপিএমকেই দেওয়া হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি কংগ্রেসের এই আসনের সাবেক সাংসদ দীপা দাসমুন্সী। ফলে এই আসন নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। দীপা দাশমুন্সী অনড় থাকায় এই আসনে দীপা ও সেলিম পৃথকভাবে লড়েন। কিন্তু দুজনই হেরে যান বিজেপি প্রার্থীর কাছে। একইভাবে বহরমপুর আসনের সাংসদ ছিলেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। সিপিএম আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, তারা অধীর চৌধুরীর আসনে প্রার্থী দেবে না। ফলে, এই আসনে জিতে যান কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী।

তাই এবারের লোকসভা নির্বাচনে ফলাফলের পর কংগ্রেস এবং সিপিএম এই উপলব্ধিতে আসে, এই রাজ্যে বিজেপিকে ঠেকাতে গেলে ফের এক হতে হবে এই দুই দলকে। দুই দল পৃথকভাবে লড়লে কারও পক্ষে জয়ী হওয়া সহজ হবে না। কারণ, এই রাজ্যে বিজেপির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।

তাই আগামী দিনের পৌরসভা, পৌর করপোরেশন, রাজ্য বিধানসভা ও বিধানসভার তিনটি আসনের উপনির্বাচনকে সামনে রেখে অতীতের সব ক্রুটিকে সরিয়ে ফেলে এবার ফের কাছে এসেছে কংগ্রেস ও সিপিএম। এ বছর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিধানসভার তিনটি আসনের উপনির্বাচন। আসন তিনটি হলো কালিয়াগঞ্জ, খড়গপুর ও করিমপুর আসন। আগামী বছর নির্বাচন হবে রাজ্যের ১২২টি পৌরসভা এবং ছয়টি পৌর করপোরেশনের নির্বাচন। কলকাতা পৌর করপোরেশনের রয়েছে ১৪১টি আসন। আর ২০২১ সালে নির্বাচন হবে রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের নির্বাচন।

এই তিন নির্বাচনে যাতে কংগ্রেস এবং সিপিএম ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে পারে, সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বৈঠক করেছেন কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সোমেন মিত্র, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁরা বৈঠক করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, বিজেপি-তৃণমূল রুখতে কংগ্রেস-সিপিএমের বিকল্প নেই। এ ভাবনা নিয়ে এখন এই দুই দল কাছাকাছি এসেছে। সামনের নির্বাচনে কীভাবে এই দুই দলের আসন ভাগাভাগি হবে, তাই নিয়ে আলোচনা চলছে। নেতারা বলেছেন, এবার সবকিছুর ঊর্ধ্বে থেকে এই দুই দলকে এগোতে হবে। আরও কাছাকাছি হয়ে লড়তে হব বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

কংগ্রেস-সিপিএমের এই জোটবদ্ধ হয়ে লড়ার প্রসঙ্গে কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সোমেন মিত্র সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমাদের জোট করে লড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আমরা এবার রাজ্যজুড়ে জোট করে লড়ব। এই জোট হবে বিজেপি-তৃণমূলকে হারানোর জোট। কারণ তৃণমূল- বিজেপি এখন একে অপরের পরিপূরক।’
জানা গেছে, আসন্ন বিধানসভার তিনটি আসনের উপনির্বাচনে কংগ্রেস-সিপিএম আসন সমঝোতা করে নিয়েছে ইতিমধ্যে। কংগ্রেস লড়বে নদীয়ার কালিয়াগঞ্জ ও পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর আসনে। আর সিপিএম লড়বে নদীয়ার করিমপুর আসনে।