'কাশ্মীরিদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবেই'

মুখে কাপড় বেঁধে ও হাতে প্ল্যাকার্ড ধরে বিক্ষোভ করেন অধিকারকর্মীরা। গতকাল নয়াদিল্লিতে।  ছবি: এএফপি
মুখে কাপড় বেঁধে ও হাতে প্ল্যাকার্ড ধরে বিক্ষোভ করেন অধিকারকর্মীরা। গতকাল নয়াদিল্লিতে। ছবি: এএফপি

এক দিন পরেই ঈদ। অন্য বছর এ সময় ঈদের আগে কেনাকাটা করতে আসা লোকে গমগম করত জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের প্রধান বাজার লালচক। পোশাক, জুয়েলারি ও মিষ্টির দোকানে মানুষের ভিড়ে পা ফেলা ছিল কষ্টসাধ্য। বাজারটিতে কোরবানির পশুতে ভরা থাকত। কিন্তু এবার সপ্তাহজুড়েই সেই বাজার একেবারে ফাঁকা। গত বুধবার ওই বাজারে ভারতের পুলিশ আরও দুজন মানুষ ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি। গত সোমবার ভারত সরকার কাশ্মীরের বিশেষ সুবিধা বাতিলের পর পুরো কাশ্মীরের মতো লালচকের বাজারও পুরোপুরি অবরুদ্ধ।

শ্রীনগরে ফাঁকা রাস্তায় ওষুধ কেনার জন্য ছোটাছুটি করছিলেন নুসরাত আমিন নামের এক বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘আমাদের জীবন এখন পুরোটাই ভিন্ন। এটা অন্যায়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা রাস্তায় বের হতে এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বাধ্য হব।’

কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ভারতের সংবিধানে ৩৭০ ও ৩৫এ অনুচ্ছেদ বিলোপের মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়েছে কাশ্মীরের সংবিধান ও পতাকা। কাশ্মীরের বাসিন্দা ছাড়া ওই অঞ্চলে বাইরের কেউ জমি কিনতে, চাকরি করতে পারতেন না। এখন সেটা পারবেন অন্য এলাকার লোকেরা। অনেক কাশ্মীরির আশঙ্কা, রাজ্যের জনসংখ্যাগত চিত্র পরিবর্তন ঘটাতে, তাঁদের জীবনব্যবস্থার পরিবর্তন আনতেই ভারত সরকারের এই কূটচাল।

ভারতের চিরশত্রু প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতের ওই পদক্ষেপকে জাতিগত নিধন অভিযানের অংশ বলেছেন। আর আরেক ক্ষমতাধর চীন এটা অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত হিসেবে সমালোচনা করেছে।

ভারত সরকারের এই পদক্ষেপের কারণে ভবিষ্যতে যাঁরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হবেন, সেই কাশ্মীরিরা এখনো নীরব। কাশ্মীরজুড়ে জারি রয়েছে কারফিউ। যোগাযোগও একেবারে বন্ধ। স্থানীয় গণমাধ্যমের কণ্ঠও একেবারে রোধ করা হয়েছে। ভারতের সিদ্ধান্তে কাশ্মীরিরা চরম ক্ষুব্ধ, তা দেখা গেল আবাসিক এলাকায় সড়কের পাশের লেনে এসে জড়ো হওয়া কিছু লোকের চোখেমুখে। সেখানে থাকা মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘একদিকে তারা (ভারত) বলছে, কাশ্মীর আমাদের। একই সময় তারা আমাদের হত্যা করছে। এখানে যা যা করা দরকার, ক্ষমতা ও বাহিনী দিয়ে তারা সবকিছু করছে।’

রফিক বলেন, ‘একটি শিশু জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেই ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভারতীয় বাহিনীকে দেখতে পাচ্ছে। এই ধরনের নিপীড়ন তার মনে কি প্রভাব ফেলবে না? বন্দুক ও ক্ষমতা দিয়ে কি কাশ্মীরি মানুষের ভালোবাসা, মন জয় করা যাবে?’

আর ভারতের এই পদক্ষেপের পেছনে কাশ্মীরের মূলধারার রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতা দেখছেন অনেকে।

তবে রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই বলেছেন, ভারতের এই একতরফা সিদ্ধান্ত প্রতিহত করতে কাশ্মীরের জনগণের সঙ্গে আছেন তাঁরা। জম্মু–কাশ্মীর পিপল কনফারেন্সের মুখপাত্র আদনান আশরাফ বলেন, ‘যখনই বিধিনিষেধ উঠে যাবে, তখনই কাশ্মীরের জনগণের কাছ থেকে শক্ত প্রতিরোধ দেখা যাবে। আমি নিশ্চিত, কাশ্মীরিদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবেই।’