'বন্দুক তুলে নিতে প্রস্তুত'

সড়কে সতর্ক প্রহরায় নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য। জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে  গত শুক্রবার।  ছবি: এএফপি
সড়কে সতর্ক প্রহরায় নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য। জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে গত শুক্রবার। ছবি: এএফপি

গত সোমবার থেকে অবরুদ্ধ ভারতশাসিত পুরো কাশ্মীর। কারফিউ বলবৎ রয়েছে। ওই দিন কাশ্মীরের সংবিধানপ্রদত্ত বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়। ভারত সরকারের এই পদক্ষেপকে বিশ্বাসঘাতকতার ছোবল হিসেবে দেখছেন অনেক কাশ্মীরি। আর এটাতেই সেখানে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন আঁচই পাওয়া গেছে।

জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত খানিয়ার। ভারতবিরোধী বিক্ষোভের জন্য এলাকাটি খুবই বিপজ্জনক। সেখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা কঠোর। জায়গায় জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যারিকেড। সেই ব্যারিকেড দিয়ে যিনিই যাচ্ছেন, তাঁকেই তল্লাশি। রাস্তায় লোকজন খুবই কম। সাংবাদিকের গাড়ি দেখে কিছু লোক অভিযোগ জানাতে হাজির হলেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক একজন ভারতের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন। বললেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে এটা অতিমাত্রার গুন্ডামি।’

পুলিশ তখনই লোকদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কিন্তু এর মধ্যে একজনকে হাত উঁচু করে উচ্চ স্বরে বলতে শোনা গেল, ‘ওই দিন থেকে আমাদের বন্দী করে রেখেছেন আপনারা।’ 

পুলিশ সদস্যরা বলেন, ‘কারফিউ চলছে। তাই আপনাদের শিগগিরই ঘরের ভেতর যেত হবে।’ একগুঁয়েভাবে বয়স্ক লোকটি সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলেন এবং চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন, ‘আমি যাব না এখান থেকে।’ একপর্যায়ে এক যুবক তাঁর সন্তানকে কোলে নিয়ে এগিয়ে এলেন। তিনি বলতে শুরু করলেন, ‘ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমি বন্দুক হাতে তুলে নিতে প্রস্তুত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটাই আমার একমাত্র সন্তান। সে খুবই ছোট। আমি তাকেও বন্দুক হাতে তুলে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করব।’ পাশেই পুলিশ সদস্যরা তখন দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি রাগে এতটাই ফুঁসছিলেন যে, মনে হচ্ছিল তিনি কাউকে পরোয়া করেন না। 

মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর উপত্যকার অনেকের সঙ্গে কথা হয় বিবিসির এই সাংবাদিকের। তাঁদের সবাই জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়ে তাঁরা আর বসে থাকতে চান না। ৩০ বছর ধরেই তাঁরা লড়াই করছেন। মোদির সরকারের পদক্ষেপকে ‘স্বৈরাচারী আদেশ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই পদক্ষেপকে কখনোই মেনে নেবেন না তাঁরা। এটা কাশ্মীর ও ভারতের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। 

অতিমাত্রায় কড়াকড়ির কারণে শ্রীনগর ভুতুড়ে শহরে পরিণতি হয়েছে। দোকানপাট, স্কুল-কলেজ ও অফিস-আদালত বন্ধ রয়েছে। যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই ভারী অস্ত্র হাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের টহল। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী নেতা, শিক্ষাবিদসহ শত শত লোককে আটক করা হয়েছে। 

বিশেষ মর্যাদা বাতিল ঘোষণার আগে দিল্লি থেকে পালিয়ে আসেন কাশ্মীরি রিজওয়ান মালিক। তিনি বলেন, কাশ্মীর এখন একটি বড় জেলখানার মতো।

পুলওয়ামার বাসিন্দা আইনজীবী জাহিদ হোসেন দার বলেন, ‘কাশ্মীর এই মুহূর্তে অবরুদ্ধ। এ অবস্থা তুলে নেওয়া হলে সমস্যা শুরু হবে।’

বিশেষ মর্যাদা বাতিল নিয়ে যুবকদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন বেশি জ্বলছে, সেটা বোঝা গেল উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র মুসকান লতিফের কথায়। তাঁর কথা, ‘এখন সমুদ্রের মতো শান্ত অবস্থা। কিন্তু সুনামি শিগগিরই উপকূলে আঘাত হানবে।’