এবার পশ্চিমবঙ্গ ভাগের দাবি

বিমল গুরুং ও রাজু সিং বিস্ত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বিমল গুরুং ও রাজু সিং বিস্ত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করে দার্জিলিংকে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার দাবি জানিয়েছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুং। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে তিনি এই দাবি জানান। জম্মু ও কাশ্মীর দ্বিখণ্ডিত হওয়ার পরপরই মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে লেখা এক চিঠিতে এ দাবি তুলেছেন তিনি। গতকাল শনিবার একই দাবি এসেছে দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু সিং বিস্তের পক্ষ থেকেও।

গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিজেএম) ভারতের একটি নথিবদ্ধ রাজনৈতিক দল। দলটি পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল ও ডুয়ার্স নিয়ে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য গঠনের দাবি জানাচ্ছে। ২০১৭ সালের ৮ জুন পুলিশের সঙ্গে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থকদের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পাহাড়। বহু গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে মানুষ খুন, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ হত্যাসহ কয়েকটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। সেই মামলার জেরে বিমল গুরুং এখনো আত্মগোপন করে আছেন অজ্ঞাত স্থানে।

ফলে এবারের লোকসভা নির্বাচনেও বিমল গুরুং প্রকাশ্যে আসতে পারেননি। উচ্চ আদালতে জামিনও পাননি। বিমল গুরুং তাঁর গোপন আস্তানা থেকে মোদির জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মোদিকে পাঠানো এক বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে সার্থক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ। দার্জিলিংয়েও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করলে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে।’

বিমল গুরুংয়ের এই বার্তার পর পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উঠে আসে নতুন এক প্রশ্ন, তবে কি মোদি সরকার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যকেও ভেঙে দেবেন? বিমল গুরুংদের দাবিকে সমর্থন জানাবেন? যদিও ইতিমধ্যে পাহাড়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিমল গুরুংয়ের এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। শুধু তা–ই নয়, বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে জনমুক্তি মোর্চার যে নেতা মুখ্যমন্ত্রী মমতার পাশে দাঁড়িয়ে বিমল গুরুংদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে ধরেছিলেন, সেই নেতা বিনয় তামাংও কেন্দ্রশাসিত গোর্খাল্যান্ডের দাবির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।

বিনয় তামাংকে দিয়ে মমতা ভেঙে দিয়েছেন বিমল গুরুংয়ের পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের আন্দোলন। এমনকি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাও প্রায় বিলুপ্তির পথে। দার্জিলিংয়ের স্বশাসিত সংস্থা গোর্খাল্যান্ড টেরিটরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) প্রধান পদেও বসিয়েছেন বিনয় তামাংকে। এসবের মাঝেই বিমল গুরুং উসকে দিলেন ফের পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি। যদিও এই দাবিকে মানছে না পাহাড় ছাড়া সমতলের কোনো রাজনৈতিক দল।

দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু সিং বিস্ত ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একটি চিঠি লিখে দার্জিলিংকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করার দাবি করেন; যদিও সে দাবিকে সমর্থন করেনি বিজেপির রাজ্য কমিটি। রাজ্য কমিটি অবস্থান নিয়েছে বাংলা ভাগের বিপক্ষে। বিজেপি কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, বাম দল—কেউই চাইছে না বাংলা ভাগ হোক, পশ্চিমবঙ্গ দ্বিখণ্ডিত হোক।

এসবের মাঝেই গতকাল শনিবার বিজেপির রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসু জানিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গ ভাগের কোনো প্রশ্ন নেই। বলেছেন, দার্জিলিংয়ের সঙ্গে জড়িত বাঙালির আবেগ। সুতরাং দার্জিলিং পশ্চিমবঙ্গেই থাকবে।

২০১৭ সালের জুন মাসে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুয়ের নেতৃত্বে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি নিয়ে প্রায় তিন মাস ধরে চলেছিল আন্দোলন। সেই আন্দোলন স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এত কিছু করার পরও এবারের দার্জিলিং লোকসভা নির্বাচন এবং দার্জিলিং বিধানসভার উপনির্বাচনেও জয়ী হতে পারেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। ওই অঞ্চলে জয়ী হয়েছে বিজেপি প্রার্থীরা। এই নির্বাচনে বিমল গুরুংয়ের দল এবং নেতা-কর্মীরা বিজেপির পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল।

তাই এবার জম্মু ও কাশ্মীর ভাগের পর নতুন করে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিকে উসকে দিল বিমল গুরুংরা। দাবি তুলল গোর্খাল্যান্ডকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করার। এরপর এই দাবি তুললেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তও। বলা হলো, গোর্খাল্যান্ডকে বিধানসভা সমেত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করার। বিমল গুরুং আরও বলেছেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি নিয়ে আন্দোলনে আছি। এই দাবি আদায়ের জন্য আমরা আন্দোলনে থাকব।’