মার্কিন ধনকুবের এপস্টেইন: আত্মহত্যা না খুন?

জেফরি এপস্টেইন। ছবি: রয়টার্স
জেফরি এপস্টেইন। ছবি: রয়টার্স

শিশু–কিশোরীদের পাচার ও জোর করে যৌনদাসীর কাজ করানোর মতো গুরুতর অভিযোগে কারাবাসে ছিলেন মার্কিন ধনকুবের জেফরি এপস্টেইন। নিউইয়র্কের একটি কারাগারে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তাঁর । এই মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ধারণা করা হচ্ছে, কারাগারের ভেতরেই আত্মহত্যা করেছেন এপস্টেইন। আবার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সামনে এনে অনেকে বলছেন, আত্মহত্যার বদলে খুনও হয়ে থাকতে পারেন এপস্টেইন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপস্টেইনের এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্তে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই)। কারাগারের কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যেও কীভাবে আত্মহত্যা করলেন এপস্টেইন, সেটিই তদন্ত করছে এফবিআই।

এপস্টেইন মারা গেলেও তদন্তে যে এক চুল পরিমাণও ছাড় দেওয়া হবে না, সে বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিও। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা যেটা জানতে চাই এপস্টেইন ঠিক কী কী জানতেন। তাঁর বেআইনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আর কোন ধনকুবেররা জড়িত ছিলেন সেটি আমরা জানতে চাই। এপস্টেইন মারা গেছেন, কিন্তু তথ্য মারা যায়নি। গোপন তথ্য উদ্ধারে তদন্ত অব্যাহত রাখতে হবে।’

এর আগেও বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন এপস্টেইন। তারপারও কেন তাঁর ওপর অতিরিক্ত নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়নি, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ডি ব্লাসিও। তিনি বলেছেন, ‘তাঁকে কেন বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়নি? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।’ অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারকে লেখা এক চিঠিতে রিপাবলিকান সিনেটর বেন সাসও প্রশ্ন তুলেছেন, কেন তাঁকে আরও কড়া নজরদারিতে রাখা হলো না। তিনি বলেছেন, ‘বিচার বিভাগের প্রত্যেকে জানতেন এই ব্যক্তি আত্মহত্যা করতে পারেন। তাহলে কেন তাঁকে আরও নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হলো না? তাঁর গোপন করা তথ্যগুলোকেও তাঁর সঙ্গে মরে যেতে দেওয়া যাবে না।’

এদিকে বিচার হওয়ার আগেই এপস্টেইনের এমন মৃত্যুতে হতাশ ভুক্তভোগীরা। জেনিফার আরাওজ নামের এক ভুক্তভোগী নারী সিএনবিসিকে বলেছেন, ‘এপস্টেইনকে তাঁর কৃতকর্মের জন্য শাস্তি পেতে হবে না, এটা ভাবতেই রাগ হচ্ছে আমার। তাঁর কৃতকর্মের শিকার হয়েই সারা জীবন কাটাতে হবে আমাদের।’ জেনা-লিসা জোনস নামের আরেক নারী লিখেছেন, ‘আরও একবার আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেল সে। শাস্তির সহজ উপায়টাই বেছে নিয়েছে সে।’

কারাগার থেকে ম্যানহাটনের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এপস্টেইনকে। সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ছবি: রয়টার্স
কারাগার থেকে ম্যানহাটনের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এপস্টেইনকে। সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ছবি: রয়টার্স

কিশোরী পাচার ও যৌনকর্মে অংশ নিতে বাধ্য করার অভিযোগে কারাগারে ছিলেন ৬৬ বছর বয়সী এপস্টেইন। তাঁর বিরুদ্ধে নতুন কিছু অভিযোগের আইনি নথিপত্র প্রকাশ্যে আসার একদিন পরই রহস্যজনকভাবে মারা গেলেন তিনি। যে কারণে তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে বেশ কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্বও সামনে এসেছে। এপস্টেইনের বেআইনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নামী কেউ যুক্ত থাকতে পারেন বলে খুন করা হয়েছে তাঁকে, এমনটাও বলা হচ্ছে।

নিউইয়র্কে জন্ম নেওয়া এপস্টেইনের বিরুদ্ধে ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের জোরপূর্বক যৌনকর্মে অংশ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। ২০০৮ সালের ৬ জুলাই নিউজার্সিতে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতে দেখা গেছে তাঁকে। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও যুক্তরাজ্যের প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে অনেকবারই দেখা গেছে এপস্টেইনকে। ২০০২ সালে নিউইয়র্কের এক সাময়িকীতে এপস্টেইনকে ‘চমৎকার মানুষ’ হিসেবে অভিহিত দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এপস্টেইনকে ১৫ বছর ধরে চিনতেন বলেও তখন মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প।