বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে কেন?

বিশ্বজুড়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত নগরায়ণ, এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে ভ্রমণ এর বড় কারণ। দক্ষিণ আমেরিকা ও এশিয়া মহাদেশের মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এখনই পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গুর মহামারি ভয়ংকর রূপ নেবে।

চলতি বছরের এ পর্যন্ত শুধু দক্ষিণ আমেরিকাতেই মশাবাহিত জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ লাখ মানুষ। এর ৮০ শতাংশই ফুটবলের দেশ ব্রাজিলে। নিকারাগুয়ায় গত ৭ মাসে ৫৫ হাজার লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর সতর্কতা জারি করেছে দেশটি সরকার। পাশের দেশ হন্ডুরাসে ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় মহামারি আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশগুলোতেও বিশালসংখ্যাক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ফিলিপাইনে ডেঙ্গুতে ৬২২ জনের মৃত্যু হয়েছে; আক্রান্ত হয়েছে দেড় লাখের বেশি। চলতি সপ্তাহে দেশটিতে জাতীয় মহামারি ঘোষণা করে সরকার। বাংলাদেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এশিয়ার শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের মতো দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ।

১৯৭০–এর দশকের দিকে ফ্লু–জাতীয় ডেঙ্গু ভাইরাসের মহামারি ৯টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এ বছর প্রাণঘাতী ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়িয়েছে ১০০টির বেশি দেশে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে। প্রতিবছর ১০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বিশেষ একটি পর্যায়ের পর ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করে। তবে ডেঙ্গু হলে প্রচণ্ড জ্বর, মাথাব্যথা, বমি হয়, যা সহ্য করা খুবই কষ্টকর। এতে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে, মানুষের কর্মক্ষমতা একেবারে নিঃশেষ করে দেয়।

>

শুধু দক্ষিণ আমেরিকাতেই আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ লাখ মানুষ
আর দক্ষিণ এশিয়ার পুরো বাংলাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু

ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট সাসেক্সের বাসিন্দা বেকা স্টানডিশ (২৫) থাইল্যান্ডে গিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর যন্ত্রণা সহ্য করার মতো নয়। আমার মনে হতো কেউ একজন আমার মাথা কড়মড় করে চিবিয়ে খাচ্ছে।’

ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা। এই মশা চিকুনগুনিয়া, পীতজ্বর ও জিকা ভাইরাসও ছড়ায়। অতীতে বিভিন্ন অঞ্চলে এসব ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, লাতিন আমেরিকা ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ডেঙ্গু বিস্তারে যথাযথ পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। ২০০৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত, ১০ বছরে মশাবাহিত জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা দুই–তৃতীয়াংশ বেড়েছে। ২০০৭ সালে মৃত্যুর সংখ্যা সেখানে ছিল সাড়ে ২৪ হাজার, ২০১৭ সালে তা গিয়ে ঠেকেছে সাড়ে ৪০ হাজারে।

লন্ডন স্কুল অব মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিনের সহকারী অধ্যাপক রাচেল লো বলেছেন, ‘দ্রুত ভাইরাস পুনরুৎপাদন ও মশার বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে ডেঙ্গু দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করেছে উষ্ণ জলবায়ু।’ তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে জনসংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ। এটা নাগরিক সেবা ও কাঠামোগত সংকট বাড়িয়ে দিয়েছে। নিম্নমানের সেবা ও ঘনবসতিপূর্ণ নগর এলাকাগুলোয় মশা ও মানুষকে খুব কাছে চলে এসেছে। ফলে মশাবাহিত রোগের মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে।’ মশাবাহিত রোগের বিস্তার ঠেকাতে

এখনই প্রয়োজনীয় জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন রাচেল।