পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নীতি বদলের ইঙ্গিত ভারতের

রাজনাথ সিং। ছবি: এএফপি
রাজনাথ সিং। ছবি: এএফপি

অপর পক্ষ থেকে আক্রমণ না করা হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না, এই নীতিমালাই মেনে চলে ভারত। তবে এবার এই নীতিমালা বদলের ইঙ্গিত দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। পরিস্থিতি বিবেচনায় আগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার নীতি থেকে সরে আসতে পারে ভারত, এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন তিনি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজস্থানের পোখরানে গিয়েছিলেন রাজনাথ সিং। সেখানেই পারমাণবিক অস্ত্রসংক্রান্ত নীতিমালায় পরিবর্তন আনার ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। এই পোখরানেই দুবার পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত।

পারমাণবিক অস্ত্রসংক্রান্ত নীতিমালা থেকে সরে আসার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে রাজনাথ সিং বলেন, ‘ভারতকে পারমাণবিক শক্তিশালী দেশ বানানোর যে দৃঢ় সংকল্প অটল বিহারি বাজপেয়ির ছিল, তার সাক্ষী এই পোখরান। ভারত এখনো আগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নীতিতেই অটল আছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এই নীতি বজায় থাকবে কি না, তা বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতির ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।’ পরে টুইট করেও একই কথা জানিয়েছেন তিনি।

রাজনাথ সিংয়ের এমন আভাসকে অনেকে পাকিস্তানের জন্য আগাম সতর্কসংকেত হিসেবেও দেখছেন। কাশ্মীর ইস্যুতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক অনেকটাই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে দিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবেন না তিনি।

এর আগে দুবার পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। দুবারই পোখরানে। ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর সরকার প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এরপর ১৯৯৮ সালে বাজপেয়ি সরকার দ্বিতীয়বারের মতো পরীক্ষা চালায়।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নিজেদের ইশতেহারে ভারতের পারমাণবিক নীতিমালা সংস্কারের কথা জানিয়েছিল নরেন্দ্র মোদির বিজেপি। তবে বিজেপি ক্ষমতায় এলে আগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নীতিমালা থেকে ভারতের সরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা সরাসরিই নাকচ করে দিয়েছিলেন মোদি। ২০১৪ সালের এপ্রিলে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদি তখন বলেছিলেন, ‘অটল বিহারি বাজপেয়ি যে নীতিমালা (আগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করা) তৈরি করে গিয়েছিলেন, সেটি কিছুতেই বদলাব না আমরা। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান শতভাগ পরিষ্কার। আগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার এ নীতিমালা আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সংস্কৃতিরই প্রতিফলন।’

কয়েক বছর ধরেই অবশ্য বিজেপির নেতারা এই নীতিমালা সংস্কারের পক্ষে কথা বলে আসছেন। ২০১৬ সালের নভেম্বরে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর আগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার নীতি সংস্কারের পক্ষে নিজের মত দিয়েছিলেন। ভারতের স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ডের সাবেক কমান্ডার-ইন-চিফ বিএস নাগপাল বলেছিলেন, আগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার এই নীতিমালা ভারতের জন্য ‘বিপদ বয়ে আনতে পারে।’