কাশ্মীরে কারফিউ উঠবে ধীরে ধীরে

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের প্রতিবাদে কাশ্মীরিদের বিক্ষোভ। গতকাল শ্রীনগরে।  ছবি: এএফপি
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের প্রতিবাদে কাশ্মীরিদের বিক্ষোভ। গতকাল শ্রীনগরে। ছবি: এএফপি

কাশ্মীর উপত্যকায় সব নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে শিথিল হবে বলে জানিয়েছেন জম্মু–কাশ্মীরের মুখ্য সচিব বিভিআর সুব্রামানিয়াম। ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

সুব্রামানিয়াম বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাত থেকেই কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথমে কিছু ল্যান্ডফোন চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে চালু হবে টেলিযোগাযোগ–ব্যবস্থা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগামী সোমবার থেকে খুলে দেওয়া হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আজ (গতকাল) থেকেই চালু হয়েছে। কর্মীদের হাজিরার সংখ্যাও উৎসাহজনক।

জম্মু–কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেন মুখ্য সচিব। পুরো কাশ্মীর কেন অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছিল, তার ব্যাখ্যা দিয়ে সুব্রামানিয়াম বলেন, সরকারের নানা সাবধানতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে গোটা রাজ্যে গত ১২ দিনে একজনেরও প্রাণহানি হয়নি। গুরুতর জখমও হননি একজনও। রাজ্যের বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন, উগ্রপন্থী এবং পাকিস্তানের প্ররোচনা ও চক্রান্ত রুখে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করাই ছিল রাষ্ট্রের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে সরকার সফল।

রাজ্য দ্বিখণ্ডিত ও সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫ (ক) ধারার বিলোপের সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীরে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাদের বন্দী করা হয়। এই বন্দিদশার দরুন মানবাধিকার হরণের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে মুখ্য সচিব বলেন, রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের বন্দী রাখা হয়েছে সাবধানতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে। এই সিদ্ধান্তও সময়ে সময়ে পর্যালোচিত হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মুখ্য সচিবের ঘোষণায় স্পষ্ট নয়, রাজনৈতিক নেতাদের কবে মুক্তি দেওয়া হবে। এ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মেয়ে ইলতিজা জাভেদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ‘ভয়েস মেসেজ’ পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে তাঁকে। বন্দী মায়ের সঙ্গে তাঁকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। কারও সঙ্গে যোগাযোগের বিন্দুমাত্র কোনো উপায় নেই। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। বার্তায় তিনি বলেন, কাশ্মীরিদের হাল খাঁচায় বন্দী পশুর মতো।

সংবাদ সম্মেলন ডেকে কাশ্মীরের মুখ্য সচিব কাশ্মীর পরিস্থিতির বর্ণনার দিনে কাশ্মীর প্রসঙ্গে দুটি আবেদনের শুনানি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। ৩৭০ ধারা বাতিলের বিরুদ্ধে আনা আইনজীবী এম এল শর্মার আবেদনটি ‘অর্থহীন’ বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। আবেদনকারী আবেদনে কী বলতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি ৩০ মিনিট ধরে পড়েছি আপনার আবেদন। কিন্তু কী বলতে চেয়েছেন, কিছুই বুঝিনি।’ এ সময় শর্মা জানান, শিগগিরই তিনি সংশোধিত আবেদন জমা দেবেন।

দ্বিতীয় আবেদনকারী কাশ্মীর টাইমস–এর কার্যনির্বাহী সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন তাঁর আবেদনে কাশ্মীরে আরোপিত সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান। ওই আবেদনের শুনানিতে সরকারের পক্ষের আইনজীবী কে কে বেনুগোপাল আদালতকে বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হয়েছে। জম্মুতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়েছে। উপত্যকাতেও হবে। পরে প্রধান বিচারপতি জানান, খবরের কাগজ পড়েছেন টেলিফোন লাইন আজই (শুক্রবার) চালু হওয়ার কথা। তাই এখনই এ বিষয়ে কোনো মতামত জানাচ্ছেন না তিনি।