যেভাবে ভুট্টাখেতে নামল উড়োজাহাজ

রাশিয়ার যে পাইলট কয়েক দিন আগে একটি উড়োজাহাজকে শস্যখেতে জরুরি অবতরণ করিয়েছেন, তিনি এখন অনেকের কাছেই নায়ক হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছেন। উড়োজাহাজটি জরুরি অবতরণ করানোর সময় সেটিতে জ্বালানি পরিপূর্ণ ছিল। তারপরেও উড়োজাহাজটির ২৩৩ জন যাত্রীর বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। 

গত বৃহস্পতিবার ইউরাল এয়ারলাইনসের ৩২১ উড়োজাহাজটি রাশিয়ার ক্রিমিয়ার সিমফেরোপলে যাচ্ছিল। উড়োজাহাজটি ওড়ার অল্পক্ষণের মধ্যেই একঝাঁক চিলের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে বিমানটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়।

উড়োজাহাজটির পাইলট দামির ইউসুপভ সাংবাদিকদের বলেছেন, বিমানটি যখন দ্রুত গতিতে আকাশে উঠছিল, তখন প্রথম একটি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি ভাবছিলেন যে উড়োজাহাজটিকে হয়তো বিমানবন্দরে ফিরিয়ে নিতে পারবেন। পাইলট বলেন, ‘যখন আমি দেখলাম উড়োজাহাজের দ্বিতীয় ইঞ্জিনটিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তখন সেটি মাটিতে পড়ে যাচ্ছিল। আমি কয়েকবার আমার মত পরিবর্তন করেছি। কারণ, আমি উড়োজাহাজটিকে ওপরে তোলার চেষ্টা করছিলাম।’ কিন্তু ফ্লাইট রাডারে দেখা যাচ্ছিল যে উড়োজাহাজটি মাত্র ৭৯৭ ফুট ওপরে আছে।

পাইলট ইউসুপভ বলেন, ‘আমি উড়োজাহাজটিকে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম এবং সেটিকে সে উচ্চতায় ধরে রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু ইতিমধ্যে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। হাতে তখন একেবারেই সময় ছিল না।’ পাইলট বলেন, ‘এ অবস্থায় আমি এবং কো-পাইলট ইঞ্জিনে তেলের সরবরাহ বন্ধ করতে সক্ষম হই। এরপর উড়োজাহাজটি ধীরে ধীরে শস্যখেতে নামিয়ে আনি।’ 

পাইলট জানান, কীভাবে জরুরি অবতরণ করতে হয়, সে বিষয়টি তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ইউরাল এয়ারলাইনসের ফ্লাইট সিমুলেটরে। ইউসুপভ বলেন, ‘নিজেকে আমার নায়ক মনে হচ্ছে না। আমার যেটা করণীয় ছিল, সেটাই করেছি।’ 

রাশিয়ার একজন শীর্ষ পাইলট ইউরি সাইতনিক। তিনি বলেছেন, উড়োজাহাজের ক্রুরা সবকিছু বইয়ের নিয়ম অনুসারে করেছেন। প্রথমে ইঞ্জিন বন্ধ করেছেন, এরপর বিমানটিকে ধীরে ধীরে মাটিতে নামিয়ে এনেছেন। পরে জরুরি নির্গমন পথ দিয়ে যাত্রীদের দ্রুত বের করে আনা হয়। 

বিমানের অবতরণ মোটেও স্বাভাবিক ছিল না। প্রায় ৭০ জন যাত্রীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সৌভাগ্যবশত ভুট্টাখেতটি নরম আবরণের মতো কাজ করেছে। বৃষ্টিতে ভিজে ভুট্টাখেতটি কিছু স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় ছিল। 

রাশিয়ার মানুষ এ ঘটনাটিকে ২০০৯ সালে নিউইয়র্কের হাডসন নদীতে একটি উড়োজাহাজের জরুরি অবতরণের সঙ্গে তুলনা করছেন। নিউইয়র্কের সে ঘটনায় উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের সময় ইঞ্জিনে পাখির আঘাত লাগে। এরপর পাইলট হাডসন নদীতে উড়োজাহাজটিকে জরুরি অবতরণ করান।