গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে বিপাকে চিদাম্বরম

পি চিদাম্বরম
পি চিদাম্বরম

আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের ওপর হয়রানি বজায় থাকল। ওই সংস্থাকে বিদেশি বিনিয়োগ পাইয়ে দিয়ে ‘কিক ব্যাক’ নেওয়ার অভিযোগে আনা মামলায় আগাম জামিন পাওয়ার আরজি সুপ্রিম কোর্ট আগামী শুক্রবার শুনবেন বলে আজ বুধবার বিকেলে জানিয়ে দেন। গতকাল মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্ট এই মামলায় চিদাম্বরমের আগাম জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়েছিল।

দিল্লি হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গতকাল রাতে সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) তদন্তকারী কর্তারা চিদাম্বরমের বাড়ি যান তাঁকে প্রেপ্তার করতে। কিন্তু সাবেক অর্থমন্ত্রীর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। চিদাম্বরমকে দুই ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে তাঁর বাড়িতে নোটিশ টাঙানো হয়। বিদেশযাত্রা রুখতে লুক আউট নোটিশও জারি করা হয়। এখন দেখার, তদন্তকারী সংস্থা কালকের মধ্যে চিদাম্বরমকে গ্রেপ্তার করতে পারে কি না।

আইএনএক্স মিডিয়ার পরিচালক ছিলেন পিটার মুখার্জি ও তাঁর স্ত্রী ইন্দ্রাণী। ইন্দ্রাণীর কন্যা শিনা বোরা হত্যা মামলায় দুজনেই বিচারাধীন বন্দী। আইএনএক্স মামলাটি সেই সময়ের, যখন প্রথম ইউপিএ সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন চিদাম্বরম। অভিযোগ, ২০০৭ সালে চিদাম্বরমের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ও তাঁর পুত্র কার্তির উদ্যোগে আইএনএক্স মিডিয়া ৩০৫ কোটি রুপি বিদেশি বিনিয়োগ আদায় করে। সেই অর্থ আদায়ের ‘উপহার’ হিসেবে কার্তি ৫ কোটি রুপির মতো ‘দালালি’ পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সিবিআই এবং ইডির অভিযোগ, অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন বহু অর্থ চিদাম্বরমেরা এইভাবে আদায় করেছেন এবং দুজনে নাকি বিদেশে ১২টির বেশি ব্যাংক খাতা খুলেছিলেন।

সাবেক অর্থমন্ত্রী ও তাঁর সাংসদপুত্রের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের একাধিক অভিযোগের তদন্ত চলছে। আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় গত মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্ট চিদাম্বরমের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পর থেকে নাটকীয়তার শুরু। বিচারপতি সুনীল গৌড় আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, সাবেক অর্থমন্ত্রীই এই আর্থিক কেলেঙ্কারি মামলার নাটের গুরু (কিংপিন)। তিনি বলেন, আইনপ্রণেতাকে কিছুতেই আইন ভাঙতে দেওয়া উচিত হবে না। আগাম জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গতকাল রাতে সিবিআই ও ইডির তদন্তকারী কর্তারা দিল্লির জোড়বাগে চিদাম্বরমের বাসভবনে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে যান। কিন্তু চিদাম্বরমের খোঁজ মেলেনি। তাঁর মোবাইল ফোনও সেই থেকে বন্ধ। আত্মসমর্পণের নির্দেশ এবং ‘লুক আউট’ নোটিশ জারি করে তদন্তকারী কর্তারা চলে যান।

গতকাল রাতেই চিদাম্বরমের আইনজীবীরা স্থির করেন, আজ সকালে আগাম জামিনের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হবে। সেই অনুযায়ী আজ সকালে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান কপিল সিবাল, অভিষেক মনু সিংভি, সালমান খুরশিদ, বিবেক তানখা ও ইন্দিরা জয়নিংয়ের মতো নামী আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং দ্বিতীয় শীর্ষ বিচারপতি এস এ বোবদে অযোধ্যা মামলার শুনানিতে ব্যস্ত বলে আবেদনটি তৃতীয় শীর্ষ বিচারপতি এন ভি রামানার এজলাসে পাঠানো হয়। কিন্তু আবেদন ত্রুটিপূর্ণ থাকায় বিচারপতি রামানা বিষয়টি শুনতেও চাননি। আবেদনকারীদের তিনি জানান, এই মামলা প্রধান বিচারপতিই শুনবেন। সেই শুনানি শুরু হয় বিকেল পাঁচটায়। সর্বোচ্চ আদালত জানান, এই মামলা শোনা হবে শুক্রবার।

চিদাম্বরমের পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস। দলের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী ও তাঁর বোন সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা টুইট করে গোটা বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। রাহুল বলেছেন, মোদি সরকার সিবিআই, ইডি এবং একশ্রেণির মেরুদণ্ডহীন সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে চিদাম্বরমের চরিত্রহননের চেষ্টা করছে। ক্ষমতার এই নির্লজ্জ অপব্যবহারের নিন্দার ভাষা নেই। একই বক্তব্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রেরও। তিনি বলেছেন, ‘চিদাম্বরমের মতো যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা যিনি বছরের পর বছর অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছেন, তিনি সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরছেন। নির্দ্বিধায় সত্য কথা বলছেন। কাপুরুষেরা তা সহ্য করতে পারছে না। তাই নির্লজ্জভাবে তাঁকে অপদস্থ ও হেনস্তা করছে। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ফল যা–ই হোক, আমরা সত্যের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।’