গ্রিনল্যান্ড বিক্রিতে রাজি না হওয়ায় ডেনমার্ক সফর বাতিল ট্রাম্পের

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড কিনতে চাইছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড কিনতে চাইছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

ডেনমার্ক সফর বাতিল করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড বিক্রিতে রাজি না হওয়ায় ডেনমার্ক সফর বাতিল করেন তিনি। ড্যানিশ রানি দ্বিতীয় মারগ্রেথের আমন্ত্রণে আগামী ২ সেপ্টেম্বর ডেনমার্ক সফরের কথা ছিল ট্রাম্পের।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেনমার্ক সফর বাতিল করেছেন। ট্রাম্প টুইট বার্তায় বলেছেন, তিনি ডেনমার্ক সফরের পরিকল্পনা বাতিল করেছেন কারণ ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিক্সেন ‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রির ব্যাপারে আলোচনার কোনো আগ্রহ দেখাননি’।

বুধবার ডেনিস প্রধানমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্পের এই ধরনের প্রস্তাব খুবই অদ্ভুত। তাঁর সফর বাতিলে ডেনমার্ক বিব্রত। তিনি বলেন, গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চল, এটি বিক্রির জন্য নয়। গ্রিনল্যান্ডের নিজস্ব সরকার ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রিনল্যান্ডের নেতা কিম কেলসেন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই দ্বীপ বিক্রি করা হবে না।

ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাঁর দেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তিনি আশা করছেন, এই সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে না। ট্রাম্পকে অতিথি হিসেবে বরণ করতে তাঁর দেশ পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েছিল।

এর আগে গত শুক্রবার দ্বীপ কেনার ব্যাপারে ট্রাম্পের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল ড্যানিশ কর্তৃপক্ষ

গ্রিনল্যান্ডের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণ
উত্তর আটলান্টিক ও আর্কটিক মহাসাগরের মধ্যবর্তী স্থানে গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান। আট লাখ ৩৬ হাজার ৩৩০ বর্গমাইল আয়তনের গ্রিনল্যান্ডের ৮০ শতাংশ অঞ্চল তুষারাবৃত। এতে অধিবাসীর সংখ্যা ৫৬ হাজারের মতো। তবে কেন এমন একটি জায়গা কিনতে চান তা ট্রাম্প মুখ ফুটে বলেননি। তবে এই ক্রয়ের পেছনে বিশ্লেষকেরা কয়েকটি স্পষ্ট কারণ তুলে ধরেছেন। এগুলোর একটি হলো প্রাকৃতিক সম্পদ। গ্রিনল্যান্ড বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের আধার। লোহা, আকরিক, সিসা, দস্তা, হিরা, সোনা, ইউরেনিয়াম ও তেল—বিরল সব প্রাকৃতিক উপাদানের কী নেই সেখানে! দ্বীপটির বেশির ভাগ এলাকা তুষারাবৃতের মধ্যে থাকায় সেই স্থানগুলো কেউ এখনো ব্যবহার করতে পারেনি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে দ্বীপটির বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। চলতি গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা গ্রিনল্যান্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুটি বরফ গলার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন। দ্বীপটির বরফ গলার ফলে সেখানকার ভূমি ব্যবহারের সুযোগ বাড়বে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের অপার সম্ভাবনাও উন্মোচিত হবে। এ কারণেই ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড কেনায় ঝুঁকতে পারেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের ডেনমার্কের ওই দ্বীপ কেনার পেছনে ভূরাজনৈতিক কারণও থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে ইতিমধ্যে পা রেখেছে। সেখানে ঠুলে এয়ার বেস নামে একটি সেনাঘাঁটি স্থাপন করেছে মার্কিন প্রশাসন। আর্কটিক সার্কেলের সাড়ে ৭০০ মাইল উত্তরে অবস্থিত ওই সেনাঘাঁটি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন। সেখানে একটি রাডার স্টেশন রয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রিম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কব্যবস্থার একটি অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারফোর্স স্পেস কমান্ড ও নর্থ আমেরিকান অ্যারোস্পেস ডিফেন্স কমান্ডও সামরিক ঘাঁটিটি ব্যবহার করে থাকে। ইউরোপে সামরিক শক্তি বাড়াতে গ্রিনল্যান্ড কেনার চিন্তাভাবনাও করতে পারেন ট্রাম্প।

গ্রিনল্যান্ড কেনার চেষ্টার পেছনে আরেকটি কারণ হতে পারে—নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতার জাহির। অন্য দেশের সম্পদ কেনাকে প্রেসিডেন্টের বাড়তি দক্ষতা হিসেবে দেখা হয় মার্কিন মুলুকে। তাই গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডকে নিজের পকেটে পুরতে চান। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চান ট্রাম্প—প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গ্রিনল্যান্ড কেনার বিষয়টি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা, অন্যদিকে নিজের দক্ষতার প্রমাণ দেওয়া।

তবে গ্রিনল্যান্ডের প্রতি এমন আগ্রহ কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পই প্রথম দেখাচ্ছেন না। এর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্রুম্যানও গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ডেনমার্ককে। ১৯৪৬ সালে দেওয়া ওই প্রস্তাবে গ্রিনল্যান্ডের বিনিময়ে ১০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

দ্বীপ কেনা-বেচা কি নতুন কিছু?
এ ধরনের অঞ্চল কেনাবেচার ঘটনা নতুন কিছু নয়। ইতিহাসের পাতা উল্টালেই পাওয়া যাবে এমন তথ্য। যেমন—যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যটি যুক্তরাষ্ট্র ১৮০৩ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে কিনেছিল। সে সময় ৮ লাখ ২৭ হাজার বর্গমাইল বিস্তৃত এ অঞ্চল কিনতে যুক্তরাষ্ট্রকে গুনতে হয়েছিল দেড় কোটি ডলার। ১৮৬৭ সালে রাশিয়া থেকে ৭২ লাখ ডলারের বিনিময়ে আলাস্কা কেনার চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ ১৯১৭ সালে ডেনমার্ক থেকেই ড্যানিশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিনেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যার বর্তমান নাম ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ড।