হীরা দিয়ে পৃথিবীকে মুড়িয়ে দেওয়া যাবে

প্রাচীনকালে অনেক পরাক্রমশালী ও ধনাঢ্য রাজার খাজাঞ্চিখানাতেই সোনা, রুপা ও হীরা-মাণিক্যের অভাব ছিল না বলে জানা যায়। অনেকের কোষাগারে নাকি এত সোনা মজুত ছিল যে তাঁরা সেই সোনা দিয়ে পৃথিবীকে মুড়িয়ে দিতে পারতেন। তবে হীরা দিয়ে পৃথিবীকে মুড়িয়ে দেওয়ার কথা অন্তত গালগল্পেও নেই। সোনা দামি হলেও হীরাকে চিরকালই আরও বিরল ও দামি রত্ন বলে গণ্য করে এসেছে লোকে। তবে নতুন একটি গবেষণা বলছে, পৃথিবীতে হীরা খুবই বিরল পদার্থ নয়, বরং এর উল্টোই। পৃথিবীতে হীরার যে মজুত রয়েছে, তার সবটা উত্তোলন করা গেলে পৃথিবীকে হীরায় মোড়ানো কঠিন কিছু নয়।

গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) একদল গবেষক, যা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে জিওকেমিস্ট্রি, জিওফিজিকস, জিওসিস্টেমস গবেষণা সাময়িকীতে। গবেষণা দলটি জানিয়েছে, পৃথিবীতে এর আগে হীরার যে মজুত জানা গিয়েছিল, বাস্তবে তার ১ হাজার গুণ বেশি হীরা রয়েছে পৃথিবীতে। এর পরিমাণ হিসাব করে দেখা গেছে, ভূপৃষ্ঠের গভীরে কোয়াড্রিলিয়ন টন শুধু হীরাই মজুত রয়েছে। সংখ্যাটি কত বড়, তা বোঝাতে একে ভেঙে লেখা যাক। এটি ১ ট্রিলিয়ন টনের ১ হাজার গুণ বেশি! ভূকম্পন মাপার প্রযুক্তি (সিসমিক টেকনোলজি) ব্যবহার করে নির্ণয় করা হয়েছে।

ভূপৃষ্ঠের গভীরের গঠন আরও বিস্তারিত বোঝার জন্য শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে পরীক্ষা করতে গিয়ে তাঁরা দেখেন, ভেতরে অপ্রত্যাশিত দ্রুতগতিতে শব্দতরঙ্গ অতিক্রান্ত হচ্ছে। শব্দতরঙ্গের গতিবেগ পরিবর্তিত হয় ভূপৃষ্ঠের গভীরের শিলা ও খনির পদার্থের গঠন, তাপমাত্রা ও ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে। ভূপৃষ্ঠের গভীরে শিলাগুলো এমনিতে উল্টো করে রাখা পর্বতমালার মতো, যাকে ক্রেটন বলে। এগুলো তুলনামূলক কম ঘনত্বের। তবে বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, এসব ক্রেটনের নিচের (রুট) দিকে শব্দতরঙ্গ দুই গুণ বেশি গতিতে যাচ্ছে। এই গতি কম্পিউটারে বিভিন্ন শিলার ত্রিমাত্রিক মডেল (ভার্চ্যুয়াল শিলা) নিয়ে দেখা যায়, একমাত্র ক্রেটনের উপাদানে হীরার উপাদান বাড়িয়ে বাস্তবের অনুরূপ গতিবেগ পাওয়া যাচ্ছে।