এবার ব্যাকস্টপ বাতিলে বার্লিনে বরিস জনসন

বার্লিনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। ছবি: সংগৃহীত
বার্লিনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যর প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তিতে কিছু বিষয়ে ছাড়ের আশায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বার্লিন সফরে বরফ গলেনি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বরিসের বার্লিন সফরে সংবর্ধনার কোনো ঘাটতি না থাকলেও কাজের কাজ হয়নি।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বার্লিন সফরে আসেন। চ্যান্সেলর ভবনে যথাযোগ্য মর্যাদায় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ গার্ড অব অনার দেওয়া হয় বরিস জনসনকে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্যতম সমালোচক বরিস জনসনের সফরের আগেই জার্মানির সরকারি মাধ্যমগুলো আভাস দেয় যে বরিসের বার্লিন সফরে প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তির নড়চড় হবে না।

এরপরও চুক্তির একটি অংশ ব্যাকস্টপ বিষয়ে ব্রিটিশ পক্ষের আপত্তি ও নতুন সংশোধিত প্রস্তাব নিয়ে বরিস বার্লিন সফরে আসেন। ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের পর ইইউভুক্ত স্বাধীন আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের অংশ উত্তর আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার সীমান্তে মানুষ ও পণ্যের বাধাহীন চলাচলের নিশ্চয়তাকে বলা হচ্ছে ব্যাক স্টপ।

শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা অন্য কোনো উপায়ে আয়ারল্যান্ড সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার বিকল্প পাওয়া না গেলে ব্যাকস্টপ ব্যবস্থা কার্যকর হবে। এ ব্যবস্থা অনুযায়ী উত্তর আয়ারল্যান্ড ইইউ আইনের অধীনে থাকবে এবং যুক্তরাজ্যকে শুল্ক ও বাণিজ্যসংক্রান্ত ইইউর কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও তাঁর অনুসারী ব্রেক্সিটপন্থীরা এই ব্যবস্থাকে যুক্তরাজ্যের সার্বভৌমত্ববিরোধী বলে মনে করছেন।

এই ব্যাকস্টপ বিষয়টি সংশোধন বা বাতিলের জন্যই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বার্লিন সফর। বার্লিন সফরের আগে বরিস জনসন ব্যাকস্টপ-সংক্রান্ত বিষয়টি বাতিল এবং বিকল্প হিসেবে পাল্টা প্রস্তাব দিয়ে ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি ডোনাল্ড টুস্ককে চার পৃষ্ঠার একটি চিঠি লেখেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ব্রিটিশ জনগণের উদ্দেশে তাঁর প্রথম ভাষণে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে এলে যুক্তরাজ্য পৃথিবীর অন্যতম অর্থনৈতিক সবল দেশে পরিণত হবে বলে জানিয়েছেন।

বুধবার বার্লিনে দুই নেতার মধ্য আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে উভয় নেতা ব্রিটেন ও জার্মানির জনগণের ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব ও সম্পর্কের কথা বলে পরস্পরের প্রশংসা করেন। আঙ্গেলা ম্যার্কেল জানিয়ে দেন, ব্রেক্সিট বিষয়ে নতুন কোনো সংশোধনীর অবকাশ নেই। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রেক্সিট বিষয়ে তাঁর দেশ আর এগোতে চায় না বলে জানান। তবে ব্রিটিশ সরকার ৩০ দিনের মধ্য ব্যাকস্টপ ব্যবস্থার অনুরূপ কোনো বাস্তবসম্মত প্রস্তাব ইইউর সামনে পেশ করতে পারে।

আগামীকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রেক্সিট বিষয়ে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এমানুয়েল মাঁখোর সঙ্গে কথা বলবেন। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাঁখোর উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট মাঁখো ব্রেক্সিট বিষয়ে সম্পাদিত সমঝোতা চুক্তি থেকে সরে আসবেন না। তা ছাড়া বেক্সিট-বিষয়ক ইইউর প্রধান মিশাইল বার্নিয়ার এর আগে যে চুক্তি সম্পন্ন করেছেন, তার অন্য কোনো বিকল্প সম্ভব নয় বলে তিনি জানিয়েছেন। চুক্তিহীন বেক্সিটের বিষয়ে যুক্তরাজ্যই দায়ী থাকবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন। মাঁখো প্রশ্ন রাখেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কোনো বাণিজ্য চুক্তি যুক্তরাজ্যকে আপাত অর্থনৈতিক পতনের হাত থেকে রক্ষা করলেও চুক্তিহীন ব্রেক্সিট সম্পন্ন হলে যুক্তরাজ্যের কাছে ইইউর প্রাপ্ত দেনাও কি যুক্তরাষ্ট্র পরিশোধ করবে! দীর্ঘ আড়াই বছরের চেষ্টার পর গত বছরের নভেম্বরে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ব্রেক্সিট বিচ্ছেদ নিয়ে চুক্তি সম্পাদন করেন। তবে চুক্তিটি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুমোদিত না হওয়ায় এই বছরের ১০ এপ্রিল উভয় পক্ষের সম্মতিতে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের সময়সীমা ৩১ অক্টোবর ২০১৯ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।