কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলার কিছু নেই: ইমরান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস

কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে আর কথা বলার মতো কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেন, এরই মধ্যে শান্তি ও আলোচনার জন্য দিল্লির প্রতি যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তা ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। দুই প্রতিবেশীদের মধ্যে যে হারে উত্তেজনা ও চাপ বাড়ছে তা চিন্তার।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ সব কথা বলেছেন ইমরান খান।

কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক দিনকে দিন খারাপ হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে বারবার ধাক্কা খেয়েছে পাকিস্তান। তবে দেশটি হাল ছাড়েনি। জাতিসংঘ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবার হস্তক্ষেপ চাইলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। সামগ্রিক বিচারে হতাশার সুরে ইমরান খান বললেন, ভারতের সঙ্গে কথা বলতে আর পাকিস্তান আগ্রহী নয়।

রাজধানী ইসলামাবাদে নিজের অফিসে ইমরান খানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাংবাদিক সালমান মাসুদ ও মারিয়া আবি-হাবিব। গতকাল বুধবার প্রকাশিত হয়েছে সাক্ষাৎকারটি। ইমরান খান বলেন, ভারতের সঙ্গে কথা বলার মতো কিছু নেই। আমি আলোচনার সব চেষ্টাই করেছি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, যখন আমি পেছনের দিকে ফিরে তাকাই দেখি তারা সেসব শান্তি আলোচনার প্রস্তাবকে নিজেদের আত্মতুষ্টি হিসেবে নিয়েছেন।

দুই দিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন কাশ্মীর ইস্যুতে প্রয়োজনে মধ্যস্থতা করতে চান। শিগগিরই তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আবারও কাশ্মীর ইস্যুতে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। এরপরই ইমরান বললেন, পাকিস্তান বারবার আলোচনায় বসার কথা জানালেও তাতে কোনো গুরুত্ব দেয়নি ভারত। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের আগে ও পরে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।

নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে কথা বলে আর কোনো লাভ নেই। শান্তি রক্ষার্থে ও কথোপকথনের জন্য আমি যে সব পদক্ষেপ নিয়েছি, মনে হয় সেইগুলোকে তাঁরা তোষণের চোখে দেখেছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু আমাদের করার নেই।’

ভারতের সঙ্গে কথা বলা অপ্রাসঙ্গিক জানিয়ে ইমরান খান বলেছেন, পরমাণু শক্তি নানা ইস্যুতে দুই প্রতিবেশীদের মধ্যে যে হারে উত্তেজনা ও চাপ বাড়ছে তা চিন্তার। দিল্লিকে দেওয়া জবাবে তিনি জানিয়েছিলেন কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা মুছে দেওয়ার জন্য পাকিস্তান আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একজন ‘ফ্যাসিস্ট’ ও হিন্দু আধিপত্যবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করেন ইমরান খান।

ইমরান খান বলেছেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কাশ্মীরে ৮০ লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকিতে। আমাদের সবার মধ্যে আতঙ্ক যে, সেখানে জাতি নিধন ও গণহত্যা ঘটতে পারে।’

সাক্ষাৎকারে ইমরান খান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি সামরিক ‘অ্যাকশনের’ বৈধতা দেওয়ার জন্য ভারত অনেক কিছুই করতে পারে। আপনারা দেখছেন দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এখন চোখে চোখ রেখে কথা বলছে। এমন অবস্থায় যেকোনো কিছুই ঘটে যেতে পারে। আর তা যদি হয়, তবে সারা বিশ্বের জন্য এটি একটি বিপদের কারণ হবে।

ভারতের পক্ষ থেকে ইমরান খানের এ সাক্ষাৎকার নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

৫ আগস্ট ভারতের বর্তমান বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে দ্বিখণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। রাজ্যটিকে দ্বিখণ্ডিত করে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে দুটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সৃষ্টির সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে ১৯৪৭ সালে কাশ্মীরকে সংযুক্তকরণের সময় যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তাও ভেঙে দেওয়া হলো। ভারতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশটির হাইকমিশনারকে বহিষ্কার করে পাকিস্তান। নয়াদিল্লির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করার সিদ্ধান্ত জানায় তারা। কাশ্মীর নিয়ে বৈঠক আয়োজনের জন্য তারা নিরাপত্তা পরিষদে চিঠি দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে রেল, ট্রেন ও বাস যোগাযোগ পাকিস্তান বন্ধ করে দিয়েছে। ভারত অবশ্য জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পদক্ষেপকে একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বিবেচনা করছে। তাদের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে ‘বাস্তবতা মেনে নেওয়ার’ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।