জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে এককাট্টা যুক্তরাজ্যের মানুষ

জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন ঠেকাতে দ্রুততম সময়ে কার্বন নিঃসরণমুক্ত (নেট জিরো কার্বন) দেশে পরিণত হতে চায় যুক্তরাজ্য। ২০০৮ সালে প্রণীত জলবায়ু পরিবর্তন আইনে যুক্তরাজ্য ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ৮০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করে। ছবি: রয়টার্স
জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন ঠেকাতে দ্রুততম সময়ে কার্বন নিঃসরণমুক্ত (নেট জিরো কার্বন) দেশে পরিণত হতে চায় যুক্তরাজ্য। ২০০৮ সালে প্রণীত জলবায়ু পরিবর্তন আইনে যুক্তরাজ্য ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ৮০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করে। ছবি: রয়টার্স

ব্রেক্সিটসহ রাজনৈতিক নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যের মানুষ নানা মতে বিভক্ত। তুমুল বিভাজনের এই সময়েও ব্রিটিশরা একটি বিষয়ে একমত। তা হলো, পৃথিবী রক্ষায় জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন ঠেকাতে হবে। আর এ জন্য যুক্তরাজ্যকে দ্রুততম সময়ে কার্বন নিঃসরণমুক্ত (নেট জিরো কার্বন) দেশে পরিণত হতে হবে।

বুধবার ইভেনিং স্ট্যান্ডার্ড-এ প্রকাশিত এক জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের ৮৫ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন। অতীতের আর কোনো জরিপে এত মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তেনের বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন। ৫ বছর আগেও এমন গভীর উদ্বেগকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৮ শতাংশ। জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ইপসোস মোরি এ জরিপ চালায়।

গত জুলাই মাসে সূর্যের প্রখর তাপে পুড়েছিল বিশ্ব। এটি ছিল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে উচ্চ তাপমাত্রার জুলাই। ২৫ জুলাই যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বোটানিক্যাল গার্ডেনে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ধরা পড়ে, ৩৮ দশমিক ৭ সেলসিয়াস। এরপর চলতি মাসে শুরু হয় বৃষ্টির দাপট। যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিস বলছে, এটি হতে পারে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের আগস্ট।

এক–তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা মনে করেন, মানুষের পরিবেশ বিধংসী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রকৃতির এমন বিরূপ আচরণ। আর ৫৭ শতাংশ মনে করেন, মানুষের কর্মকাণ্ড এবং আবহাওয়ার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগত আচরণ এর জন্য দায়ী।

বছরখানেক আগে সুইডেনের ১৬ বছরের কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিদ্যালয়ের ক্লাস বর্জন (স্কুল স্ট্রাইক) শুরু করেন। ব্যক্তিগতভাবে শুরু করা তাঁর সেই আন্দোলন ছাড়িয়ে পড়ে দেশে দেশে। যুক্তরাজ্যসহ নানা দেশের লাখো শিক্ষার্থী সেই আন্দোলনে যোগ দেয়। এক্সটিঙ্কশন রেবেলিয়ন নামে একটি পরিবেশবাদী আন্দোলনের কর্মীরা কয়েক দফা যুক্তরাজ্যে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাঁরা ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনার দাবি তোলেন। এসব আন্দোলন জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে যুক্তরাজ্যবাসীর বিবেককে ভালোই নাড়া দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

২০০৮ সালে প্রণীত জলবায়ু পরিবর্তন আইনে যুক্তরাজ্য ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ৮০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করে। দেশটির সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে সেই আইন সংশোধন করে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য যোগ করেন। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যই একমাত্র দেশ, যারা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এমন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। তবে জরিপে উঠে এসেছে, দেশটির ৫৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, ২০৫০ সালের আরও বেশ আগেই এই লক্ষ্য পূরণ করা উচিত।

(আজ) বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-বিষয়ক সংসদীয় কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেবল প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। যাতায়াতের ক্ষেত্রে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে কয়েকটি সুপারিশ করেছে এই কমিটি। এগুলো হলো পরিবেশবান্ধব গণপরিবহনের ব্যবস্থা এবং গণপরিবহন ব্যবহারে মানুষকে উৎসাহিত করা। ব্যক্তিগত গাড়িতে চলার চেয়ে গণপরিবহনে চলার খরচ কমিয়ে আনা। ব্যক্তিগত গাড়ির বদলে ভাড়ায় গাড়ি চালানো (কার শেয়ারিং, কার হায়ার, ট্যাক্সি) উৎসাহিত করা। সাইকেল চালানো এবং হাঁটার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি।

যুক্তরাজ্যে ইতিমধ্যে ভাড়ায় সাইকেল এবং গাড়ি চালানোর বিষয়টি জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। অনলাইন কিংবা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে যে কেউ সাইকেল বা গাড়ি চাহিদামাফিক সময়ের জন্য ভাড়া নিতে পারেন। এ ছাড়া বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি (ইলেকট্রিক কার) উৎসাহিত করতে রাস্তায় রাস্তায় চার্জিং পয়েন্ট স্থাপনসহ নানা উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।