খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় ১৯ আসামির স্বীকারোক্তি

বোমা তৈরির সময় খাগড়াগড়ের এই বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ফাইল ছবি
বোমা তৈরির সময় খাগড়াগড়ের এই বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ফাইল ছবি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমানে চাঞ্চল্যকর খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার ১৯ জন আসামি গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে দোষ স্বীকার করেছেন। এই মামলায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে খাগড়াগড়ের একটি বাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) দুই সদস্য বিস্ফোরণে নিহত হন। এই ঘটনার তদন্তভার নেয় ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ)। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার বিচার চলছে কলকাতায় বিশেষ নগর আদালতে।

মামলায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবশেষ গ্রেপ্তার হয়েছেন জহিরুল শেখ। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ভারতের মধ্যপ্রদেশ থেকে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে।

এনআইএর অভিযোগ, জহিরুল শেখ ছিলেন এই দলের ন্যানো গাড়ির ড্রাইভার। ঘটনার পর তদন্তে নেমে এনআইএ জব্দ করেছিল ওই ন্যানো গাড়ি। জহিরুল বর্ধমানের শিমুলিয়া মাদ্রাসা থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে এনআইএ খুঁজছিল জহিরুলকে।

গতকাল মামলার বিচারের ধার্য তারিখে হাজির করা হয় আসামিদের। মামলার বিচারক সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলালের কাছে আগেই পেশ করা হয়েছিল ১৯ আসামির দোষ স্বীকার করার আবেদন। বিচারক জানতে চান, তাঁরা কারও প্ররোচনায় দোষ স্বীকার করার আবেদন করেছেন, নাকি স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করছেন? এরপর একে একে ১৯ আসামি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিস্ফোরণকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

আগে বিচারক বলেছিলেন, দোষ স্বীকার করলে তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে, তা কি তাঁরা জানেন? আসামিরা বলেন, ‘জানি।’ তখন আদালত বলেন, ‘তবু দোষ স্বীকার করছেন?’ আসামিরা উত্তর দেন, ‘হ্যাঁ।’ তাঁরা বলেন, তাঁরা তাঁদের সম্ভাব্য শাস্তি সম্পর্কে অবগত আছেন। ওই দিন বিচারক এই মামলার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, যাঁরা দোষ স্বীকার করছেন, তাঁদের কী শাস্তি হওয়া উচিত? জবাবে ওই কর্মকর্তা জানান, আদালত সর্বোচ্চ শাস্তি দিন তাঁদের। তবে ওই দিন মূল অভিযুক্ত কাওসর ওরফে বোমা মিজান, কদর গাজি, ডালিম শেখ, ইউসুফ শেখ দোষ স্বীকার করেননি।

গত বছরের আগস্ট মাসে এনআইএ গ্রেপ্তার করে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার মূল অভিযুক্ত কাওসার ওরফে বোমা মিজানকে। ঘটনার চার বছর পর এনআইএ তাঁকে গ্রেপ্তার করে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুর রামনগর এলাকা থেকে। এর আগে কাওসারকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এনআইএ ১০ লাখ রুপি পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছিল। এনআইএর অভিযোগ, ৩৮ বছর বয়সী মিজান ছিলেন খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মাস্টারমাইন্ড। তিনি জেএমবির শীর্ষ নেতা। তাঁর কাজ ছিল পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে জেএমবির ঘাঁটি তৈরি করা। তিনি বিহারের বুদ্ধগয়ায় বৌদ্ধ ধর্মগুরু দালাইলামার সফরের প্রাক্কালে বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণকাণ্ডেও জড়িত ছিলেন।

মিজান ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে দুই সঙ্গীসহ পলাতক হন। মিজান এরপর চোরাইপথে ভারতে এসে আত্মগোপন করেন। খাগড়াগড়ের যে বাড়িটিতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, সেটার মালিক ছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় এক নেতা। ওই বাড়ি ছিল জেএমবির ঘাঁটি। ওই বাড়িতে গ্রেনেড, বোমা তৈরি করা হতো। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর দুপুরে দোতলা বাড়িটিতে বোমা তৈরির সময় হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটলে দুজনের মৃত্যু হয়। আহত হন তিনজন। সেদিন প্রাথমিক তদন্ত শেষে পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা পুলিশ সিআইডি দাবি করে, নিহত দুজন জেএমবির সদস্য। তাঁরা হলেন শাকিল আহমেদ ও সুবহান মণ্ডল। আহত তিনজনের নাম আবদুল হাকিম, রাজিয়া বিবি ও আলিমা বিবি।