চিটফান্ড-কাণ্ডে মিঠুন-শতাব্দীর পর রুপি ফেরত দিতে চান টালিউড প্রযোজক শ্রীকান্ত মেহেতা

মিঠুন চক্রবর্তী, শতাব্দী রায় এবং শ্রীকান্ত মেহেতা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
মিঠুন চক্রবর্তী, শতাব্দী রায় এবং শ্রীকান্ত মেহেতা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের চাঞ্চল্যকর আর্থিক দুটি দুর্নীতি মামলা হলো সারদা ও রোজভ্যালি। এখান কোটি কোটি রুপি নিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দলের বহু নেতা, সাংসদ, বিধায়ক ও মন্ত্রী। তাঁদের বিরুদ্ধে এখনো ঝুলছে দুর্নীতির মামলা। মামলা থেকে রেহাই পেতে বলিউড তারকা মিঠুন চক্রবর্তী অর্থ ফেরত দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের চিত্রতারকা সাংসদ শতাব্দী রায়ও চাইছেন অর্থ ফিরিয়ে দিতে। তাঁদের পথে এবার হাঁটছেন টালিউডের অন্যতম প্রযোজক শ্রীকান্ত মেহেতা।

মিঠুন চক্রবর্তী সারদার কাছ থেকে কাজের জন্য যে অর্থ গ্রহণ করেছিলেন, তা মামলার তদন্তকারী সংস্থা ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির কর্মকর্তাদের হাতে চেকের মাধ্যমে ফিরিয়ে দিয়েছেন। ওই কেলেঙ্কারি মামলায় বারবার মিঠুনকে তদন্তের জন্য ডাকছিলেন ইডি। মিঠুনও ছিলেন তৃণমূলের সাবেক রাজ্যসভার সদস্য। তিনি ১ কোটি ৯ লাখ রুপি ইডির কাছে ফেরত দিয়েছেন।

শতাব্দী রায় পরপর তিনবার তৃণমূল থেকে সাংসদ হন। তিনিও সারদা থেকে অর্থ পেয়েছিলেন। শতাব্দী রায় সারদার ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ৪২ লাখ রুপি নেন। কর কাটার পর তা দাঁড়ায় ২৯ লাখ রুপিতে। সেই ২৯ লাখ রুপি ফিরিয়ে দিতে চাইছেন তিনি। ইডির কাছে তিনি চিঠি দিয়েছেন। সারদা মামলায় তাঁকে বারবার তলব করার পর তিনি গত ২৯ জুলাই ইডিকে চিঠি দেন।

টালিউডের অন্যতম প্রযোজক শ্রীকান্ত মেহেতা টাকা নিয়েছেন চিটফান্ড সংস্থা রোজভ্যালি থেকে। রোজভ্যালির তাঁর কাছে পাওনা সাত কোটি রুপি তিনি ফেরত দিতে চাইছেন। রোজভ্যালি চ্যানেলে ৭০টি ছবি দেওয়ার জন্য তিনি রোজভ্যালির সঙ্গে ২৫ কোটি রুপির চুক্তি করেন। সেই চুক্তি ভঙ্গ করলে রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু কলকাতা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। হাইকোর্টের নিযুক্ত সালিশিতে সাব্যস্ত হয় তিনি যে ছবি দিয়েছেন তার মূল্য ১৮ কোটি রুপি। তাই হাইকোর্ট শ্রীকান্ত মেহেতাকে সাত কোটি রুপি প্রদান করার নির্দেশ দেন।

রোজভ্যালি দুর্নীতি মামলায় ইডি শ্রীকান্ত মেহেতাকে গ্রেপ্তার করে। শ্রীকান্ত মেহেতা মুখ্যমন্ত্রী মমতার আঁকা পাঁচটি ছবি কিনেছিলেন ১৫ লাখ রুপি দিয়ে। সেই ছবি জব্দ করেছে ইডি। ১০ মাস ধরে শ্রীকান্ত মেহেতা ওডিশার কারাগারে রয়েছেন। জামিন পাচ্ছেন না। তিনি জামিন পেতে মিঠুন চক্রবর্তী ও শতাব্দী রায়ের পথ ধরতে চাইছেন।

২০১৩ সালে ফাঁস হয় সারদার আর্থিক দুর্নীতির ঘটনা। এ ঘটনায় সেদিন গ্রেপ্তার হন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন, পরিচালক দেবযানী মুখার্জি, সারদার মিডিয়া সেলের কর্ণধারও সাংসদ কুণাল ঘোষ, তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয় বোস, তৃণমূল বিধায়ক ও মন্ত্রী মদন মিত্র, কলকাতা পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক রজত মজুমদার প্রমুখ। সারদা মামলায় সাড়ে ১৭ লাখ ক্ষুদ্র আমানতকারীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। পরে অবশ্য কুণাল ঘোষ, সৃঞ্জয় বোস, মদন মিত্ররা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।

২০১৫ সালের মার্চে ফাঁস হয় রোজভ্যালি আর্থিক দুর্নীতির কথা। অভিযোগ ওঠে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের বিনিয়োগকৃত ৬০ হাজার কোটি রুপি আত্মসাতের। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হন রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু। আরও গ্রেপ্তার হন তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল এবং সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। দুটি মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই এবং ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।