রাহুলদের শ্রীনগরযাত্রায় সরকারের আপত্তি

রাহুল গান্ধী
রাহুল গান্ধী

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীসহ অন্য বিরোধীদলীয় নেতারা আজ শনিবার জম্মু ও কাশ্মীর সফরে যাচ্ছেন। তবে জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন গতকাল শুক্রবার বিরোধী নেতাদের শ্রীনগর সফরে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। প্রশাসনের দাবি, তাঁদের এ সফর রাজ্যে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পুনরুদ্ধারের চেষ্টাকে ব্যাহত করবে।

বিরোধী নেতাদের এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় জম্মু ও কাশ্মীরের তথ্য ও জনসংযোগ দপ্তরের পক্ষ থেকে এক টুইটবার্তায় বলা হয়েছে, রাজনৈতিক নেতাদের শ্রীনগর সফরে যাওয়া উচিত হবে না। কারণ, তাঁদের এ সফর অন্যদের অসুবিধায় ফেলবে। ওই বার্তায় বলা হয়েছে, ‘সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষকে আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ ও হামলার হুমকি থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। এমন এক সময়ে বিরোধীদলীয় নেতাদের সফর কাশ্মীরবাসীর জন্য মঙ্গলজনক হবে না। ’

৫ আগস্ট ভারতের বর্তমান বিজেপি–শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে দ্বিখণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। রাজ্যটিকে দ্বিখণ্ডিত করে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে দুটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সৃষ্টির সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্তের পর থেকে ওই এলাকায় নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

এনডিটিভি অনলাইন জানিয়েছে, শ্রীনগরে সফরে যাওয়া সর্বদলীয় বিরোধী নেতাদের প্রতিনিধিদলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কংগ্রেস, সিপিআই (এম), সিপিআই, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস ও ডিএমকের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।

কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে রাহুল গান্ধী ছাড়া গোলাম নবী আজাদ ও আনন্দ শর্মা জম্মু ও কাশ্মীরের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। এর আগে গত মঙ্গলবারসহ জম্মু বিমানবন্দরে মোট দুবার বাধার সম্মুখীন হন গোলাম নবী আজাদ। দুবারই তাঁকে জোরপূর্বক দিল্লিতে ফেরত পাঠানো হয়।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্ক্সবাদী) নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআইয়ের ডি রাজা, ডিএমকের তিরুচি শিব, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মনোজ ঝা ও তৃণমূল কংগ্রেসের দীনেশ ত্রিবেদিও এ প্রতিনিধিদলে অংশ থাকবেন। অনুমতি পেলে তাঁরা রাজ্যের অন্যান্য অংশ ঘুরে দেখতে পারেন। এখন পর্যন্ত সরকার কোনো রাজনৈতিক নেতাকে ওই রাজ্যে ঢুকতে দেয়নি।

সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ, মেহবুবা মুফতিসহ জম্মু ও কাশ্মীরের প্রায় ৪০০ রাজনীতিবিদ গ্রেপ্তার রয়েছেন।

এর আগে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের সহিংসতার বিষয়ে সেখান থেকে কিছু খবর এসেছে। জম্মু ও কাশ্মীরে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে—১১ আগস্ট কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর এমন মন্তব্যের সমালোচনা করেন সেখানকার গভর্নর সত্য পাল মালিক। সত্য পাল বলেন, ‘আমি রাহুল গান্ধীকে এখানে আসতে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমি আপনার জন্য উড়োজাহাজ পাঠাব। কাশ্মীরের পরিস্থিতি দেখে তারপর কথা বলবেন। আপনি একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং আপনার এ ধরনের কথা বলা উচিত না।’

ঠিক দুদিন পর সত্য পাল মালিকের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন রাহুল গান্ধী। কিন্তু গভর্নরের ভাষায়, রাহুল এই সফরে কিছু ‘পূর্বশর্ত’ আরোপ করেছেন। তাই তিনি তাঁর আমন্ত্রণটি প্রত্যাহার করে নেন। সত্য পাল মালিক এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘এখানে বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের এনে রাহুল পুরো বিষয়টিকে রাজনৈতিকীকরণ করে ফেলছেন। তাঁরা এলে সাধারণ মানুষের জীবনে আরও অশান্তি ও সমস্যা সৃষ্টি হবে।’

জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন এক টুইটবার্তায় গতকাল বলেছে, প্রবীণ রাজনৈতিক নেতাদের কাশ্মীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা ব্যাহত করা উচিত হবে না। তাঁদের এ সফর শ্রীনগরবাসীদের অসুবিধায় ফেলবে।