এনজিওকে দোষারোপের পর এবার আমাজনে যাচ্ছে সেনা

পুড়ছে আমাজন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
পুড়ছে আমাজন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

‘পৃথিবীর ফুসফুস’ হিসেবে খ্যাত আমাজনের আগুন নেভাতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করছে ব্রাজিল। রয়টার্সের খবরে জানা গেছে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ার বোলসোনারো সশস্ত্র বাহিনীকে আমাজনের আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমাজনে বেসরকারি সংস্থাগুলো আগুন দিয়েছে—এমন অভিযোগের পর আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিলেন বোলসোনারো।

দক্ষিণ আমেরিকার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতাদের বাণিজ্য চুক্তি বন্ধের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার ব্রাজিল এই সিদ্ধান্তের কথা জানাল। দেশটির ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট এক ফরমান জারি করে এ অঞ্চলে প্রকৃতি সংরক্ষণ, আদিবাসী জমি এবং সীমান্ত অঞ্চলে সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছেন।

আমাজনের অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ার বোলসোনারো। এর আগে অগ্নিকাণ্ডের জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দায়ী করেন তিনি। যেসব বেসরকারি সংগঠনের (এনজিও) তহবিল বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে আমাজনে আগুন দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন প্রেসিডেন্ট। তবে এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ড জানিয়েছে, আমাজনের অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্রাজিল যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে তারা দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে বড় পরিসরে বাণিজ্য চুক্তি অনুমোদন করবে না। বোলসোনারো এ প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার জন্য দাবানলকে ‘অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না’।

ফিনল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী ইইউকে ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেছেন। ফিনল্যান্ড বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কাউন্সিলের সভাপতি।

পরিবেশবাদী দলগুলো গতকাল শুক্রবার ব্রাজিলের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেছে। আমাজনের আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বিশ্বের নানা দেশে ব্রাজিলের দূতাবাসের বাইরে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা।

এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আগুনে পুড়ছে আমাজন। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এ বছর ৮৫ শতাংশ বেশি আগুন লেগেছে বৃহত্তম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এই বনাঞ্চলে।

বোলসোনারো গতকাল এক টেলিভিশন চ্যানেলে হাজির হন। আমাজনের দাবানল নিয়ন্ত্রণে সশস্ত্র বাহিনীকে সহায়তা করার অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘একজন সামরিক সদস্য হিসেবে আমি আমাজন বনভূমিকে ভালোবাসতে শিখেছি। আমাজনের সুরক্ষায় সহায়তা করতে চাই আমি।’সেনা মোতায়েনের বিষয়টি আঞ্চলিক গভর্নরদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফার্নান্দো আজেভেদো ই সিলভা সেনা মোতায়েনের বিষয়টি তদারকি করবেন। প্রয়োজনীয় সম্পদ বরাদ্দের দায়িত্বে থাকবেন। প্রাথমিকভাবে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি ২৪ আগস্ট থেকে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাসের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মহলের চাপ
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আমাজনের অগ্নিকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক সংকট বলে অভিহিত করেছেন।

আঙ্গেলা ম্যার্কেল একে ‘তীব্র জরুরি অবস্থা’ বলে উল্লেখ করেছেন। এমানুয়েল মাখোঁ টুইট করেছেন, ‘আমাদের বাড়ি জ্বলছে’। তাঁরা দুজনেই বলেছেন, এই সপ্তাহান্তে জি–৭ শীর্ষ সম্মেলনে আমাজনে দাবানলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা উচিত।

এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে আমাজনে ৭৫ হাজারেরও বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে আমাজনে ৭৫ হাজারেরও বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত বৃহস্পতিবার এক টুইটবার্তায় বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকটের সময় অক্সিজেন ও জীববৈচিত্র্যের একটি বৃহৎ উৎসের এর চেয়ে বেশি ক্ষতি আমরা করতে পারি না। আমাজনকে অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, গতকাল সন্ধ্যায় তিনি প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর সঙ্গে কথা বলেছেন। ট্রাম্প টুইট করেছেন, ‘আমি তাঁকে জানিয়েছি, বিশ্বের বৃহত্তম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চল আমাজনের আগুন নিয়ন্ত্রণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনোভাবে সাহায্য করতে পারে, আমরা সেই সহায়তার জন্য প্রস্তুত।’

নিজের দেশেও কম ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে না বোলসোনারোকে। ব্রাজিলের কংগ্রেস সদস্য ও নিম্নকক্ষের পরিবেশবিষয়ক ককাসের নেতা নিলতো তাত্তো বলেছেন, এনজিওগুলোর প্রতি বোলসোনারোর অভিযোগ ব্রাজিলের ৩০ বছরের পরিবেশ সুরক্ষা নীতিতে তাঁর প্রশাসনের ব্যর্থতা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা। আমাজনের এমন দুরবস্থার পেছনে বোলসোনারোকে দোষারোপ করেছেন রক্ষণশীলেরাও। বোলসোনারো কাঠুরে ও কৃষকদের জমি সাফ করতে উৎসাহিত করছেন বলে বারবার বনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এসব সমালোচনার কড়া জবাব দিয়েছেন বোলসোনারো। গতকালের টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত ভাষণে ব্রাজিল সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে ‘ভিত্তিহীন তথ্য’ ছড়িয়ে দেওয়ার সমালোচনা করেন তিনি। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, দেশটির বেশির ভাগ বন রক্ষার জন্য ‘আধুনিক আইন’ রয়েছে। মাখোঁর মতো নেতারা ‘রাজনৈতিক স্বার্থে’ আমাজনের আগুন নিয়ে নাক গলাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন বোলসোনারো।

এ অগ্নিকাণ্ডকে ভয়াবহের বদলে মাঝারি ধরনের বলে অভিহিত করেছেন বোলসোনারো। তিনি বলেন, ‘উষ্ণ বছরগুলোতে দাবানল একটি সাধারণ ঘটনা।’