শ্রীনগরে ঢুকতেই পারলেন না রাহুলেরা

রাহুল গান্ধী
রাহুল গান্ধী

রাজ্যপাল বলেছিলেন, বিমান পাঠাচ্ছি, এসে দেখে যান কাশ্মীরের পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক কি না। অথচ রাহুল গান্ধীদের ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগর বিমানবন্দরের বাইরে পা ফেলতেই দেওয়া হলো না। আজ শনিবার দুপুরে উপত্যকায় অবতরণ করলেও পরের বিমানে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদের দিল্লি ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হলো।

গতকাল শুক্রবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও অন্য বিরোধী দলের নেতারা কাশ্মীর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে উপত্যকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী আজ দুপুরে ১২ জন নেতা বিমানে রওনা হন। কিন্তু শ্রীনগর বিমানবন্দরে অবতরণই সার। রাজ্য প্রশাসন ঠিক করেই রেখেছিল, কোনো নেতাকে শহরে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

সর্বদলীয় প্রতিনিধিদের আসার খবর জানার পর শুক্রবারেই জম্মু-কাশ্মীর জনসংযোগ বিভাগ থেকে টুইট করে বলা হয়, সীমান্তপারের সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের হাত থেকে জম্মু-কাশ্মীরের জনগণকে সরকার যখন রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে, সেই সময় শীর্ষ নেতাদের সংযত হওয়া দরকার। পরিস্থিতি ঘোরালো করে দেওয়া উচিত হবে না। এই অবস্থায় রাজনৈতিক নেতাদের উপত্যকায় আসা ঠিক নয়। এতে জনসাধারণকে অসুবিধার মধ্যে ফেলা হবে।

রাজ্য প্রশাসনের এই অনিচ্ছাকে গুরুত্ব না দিয়েই সর্বদলীয় প্রতিনিধিরা দিল্লি থেকে রওনা হন। রাহুল ছাড়া সেই দলে ছিলেন কংগ্রেসের গোলাম নবী আজাদ, আনন্দ শর্মা ও কে সি বেনুগোপাল, সিপিআইয়ের ডি রাজা, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, তৃণমূল কংগ্রেসের দীনেশ ত্রিবেদী, ডিএমকের তিরুচি শিবা, আরজেডির মনোজ ঝা, এলজেডির শরদ যাদব, এনসিপির মজিদ মেমন ও জেডিএসের ডি কুপেন্দ্র রেড্ডি।

জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করা ও সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর টানা ২০ দিন ধরে উপত্যকা অবরুদ্ধ। এই তিন সপ্তাহে রাজ্যের বাইরের কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকে উপত্যকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে সব দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের। অনেককে গ্রেপ্তার করে রাজ্যের বাইরেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অসমর্থিত খবর অনুযায়ী, ধৃত রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীর সংখ্যা চার শর বেশি। কোনো দলকে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিতে দেওয়া হচ্ছে না। কয়েক লাখ আধা সেনানী সদা সজাগ। দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য কোনো কোনো মহল্লায় দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। স্কুল খুললেও পড়ুয়াদের সংখ্যা হাতে গোনা। উপত্যকার খবর বাইরে আসতে দেওয়া হচ্ছে না, বাইরের খবর উপত্যকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। টেলিফোন কিছু কিছু চালু করা হলেও মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। এই কড়াকড়ির মধ্যেও কিছু কিছু অসন্তোষের খবর বাইরে আসছে। সর্বদলীয় নেতারা উপত্যকায় গিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে চেয়েছিলেন।

আজ শ্রীনগর রওনা হওয়ার আগে দিল্লি বিমানবন্দরে কংগ্রেস নেতা গোলাম নবী আজাদ এএনআই সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমরা সবাই দায়িত্বশীল দলের নেতা। কোনো আইন ভাঙার জন্য আমরা উপত্যকায় যাচ্ছি না। যাচ্ছি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। প্রায় তিন সপ্তাহ উপত্যকা অবরুদ্ধ। কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ সরকার বলছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। স্বাভাবিকই যদি হবে তাহলে কেন নেতাদের যেতে দেওয়া হচ্ছে না?

নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হওয়ার কিছুদিন পর পশ্চিমা মিডিয়ায় অশান্তি ও বিক্ষোভের খবর প্রচার হয়েছিল। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে ছররা গুলি ব্যবহার করতে হয়েছিল বলে খবরে প্রকাশ। তাতে নাকি অনেকেই আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রাহুল গান্ধী ওই খবরের সত্যাসত্য জানতে চাওয়ায় জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক তাঁকে উপত্যকায় আসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, বিমান পাঠাচ্ছি। এসে দেখে যান। রাহুল তখন সদলে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় রাজ্যপাল সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে নেন। আজ রাহুলরা সদলে গেলেও সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখা হলো না।

রাজস্থানের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট সরকারের এই সিদ্ধান্তে সমালোচনা করে আজ বলেছেন, সরকারেরই উচিত ছিল সর্বদলীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি দেখানো, যাতে তাঁরা ফিরে এসে সত্য জানাতে পারতেন।