কাশ্মীর ইস্যুতে বিব্রত সরকারি কর্মকর্তা চাকরি ছাড়লেন

ভারতনিয়ন্ত্রিত অবরুদ্ধ কাশ্মীরে মৌলিক অধিকার না থাকার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে চাকরি ছাড়লেন এক সরকারি কর্মকর্তা। দেশটির বহুকাঙ্ক্ষিত অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অফিসার (আইএএস) পদের চাকরি ছেড়ে দিলেন ৩৩ বছর বয়সী কান্নান গোপীনাথান। চাকরি ছাড়ার কারণ হিসেবে তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের মৌলিক অধিকার না থাকা এবং এ নিয়ে ভারতীয়দের ভ্রুক্ষেপ না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

এ মাসের শুরুতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করা হয়। দেশটির সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর দ্বিখণ্ডিত জম্মু ও কাশ্মীরে কারফিউ জারি করা হয় এবং টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়। এ কারণে ২০ দিন ধরে কাশ্মীর অবরুদ্ধ। এই তিন সপ্তাহে রাজ্যের বাইরের কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকে উপত্যকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে সব দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ কাশ্মীরিদের জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন গোপীনাথান। সেই সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে ভারতের অন্য অঞ্চলের মানুষের কোনো প্রতিবাদ ও ভ্রুক্ষেপ না থাকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি এনডিটিভিকে বলেছেন, ‘আমার পদত্যাগের কোনো মূল্য না থাকলেও বিবেকের কাছে আমি জবাব দিতে পারব।’

বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন গোপীনাথান। পদত্যাগের আগে তিনি ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের জেলা দাদরা ও নগর হাভেলিতে (মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যের মাঝে) একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে সচিব পদে ছিলেন। টানা সাত বছর চাকরি করার পর ২১ আগস্ট পদত্যাগপত্র জমা দেন গোপীনাথান।

কান্নান গোপীনাথান বলেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরে ২০ দিন ধরে লাখো মানুষকে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে এবং অনেক ভারতীয়কে দেখে মনে হচ্ছে, তারা বিষয়টি মেনে নিয়েছে। এ ঘটনা ভারতে ঘটছে ২০১৯ সালে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বা এটি রহিতকরণ ইস্যু না। কিন্তু এ বিষয়ে নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার কেড়ে নেওয়া মূল ইস্যু। তারা এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে বা স্বাগত জানাতে পারত। এটা তাদের অধিকার।’ তিনি বলেন, ঘটনাটি তাঁকে এতটাই বিচলিত করেছে যে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তা যথেষ্ট ছিল।

আইএএস কর্মকর্তা থেকে অধিকারকর্মী হওয়া শাহ ফয়সালকে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে শ্রীনগরে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করেন গোপীনাথান। তিনি বলেন, ‘সাবেক এক আইএএস কর্মকর্তাকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হলো। মানুষের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। মনে হচ্ছে, দেশের অধিকাংশ মানুষের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।’

দীর্ঘদিন ধরেই নানা সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত কান্নান গোপীনাথান। তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও সক্রিয়। মিজোরামে দায়িত্ব পালনের সময় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় পুলেলা গোপীচাঁদকে শিশুদের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে ৩০টি ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করতে উৎসাহ দেন।

গোপীনাথান বলেন, তাঁরা নানা কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি চেয়ে সরকারি চিঠি পাঠানো হয়েছে তাঁকে। যেমন প্রধানমন্ত্রীর সম্মানসূচক পুরস্কারের জন্য কেন তিনি আবেদন করেননি। গত বছর কেরালায় বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ বিতরণে কেন তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছিলেন, সে সম্পর্কেও এক চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি জানান, ত্রাণকাজের সময় কেউ তাঁর পদবি জানতে পারেননি। ত্রাণকর্মীরা যখন জানতে পারেন, একজন আইএএস কর্মকর্তা ত্রাণশিবিরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন তাঁদের সঙ্গে, তখন তাঁরা খুবই অবাক হয়ে যান।

সরকারি সেসব চিঠি এত অসার ও অপ্রয়োজনীয় ছিল যে সেসব তাঁকে বিচলিত করে তুলেছিল বলে জানান। পদত্যাগের সময়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। বড় বড় বিষয় এখন তুলে ধরা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।

প্রকৌশলী কান্নান গোপীনাথান আইএএসে আবেদন করার আগে অলাভজনক সংস্থায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছেন। বস্তির শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতেন। ওই সময় হবু স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁর প্রেরণাতেই সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন বলে জানান।