'তোমরা টাকা নাও নাকি?'

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়টার্স ফাইল ছবি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়টার্স ফাইল ছবি

পুলিশের কোন কোন সদস্য রাস্তায় যানবাহন থামিয়ে টাকা তোলেন, তা জানতে চেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল সোমবার রাজ্যের বর্ধমানে আয়োজিত জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে এ প্রশ্ন তোলেন।

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসনকে হটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষমতায় আসার পর মমতার দলের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযাগ উঠতে থাকে। প্রথম পাঁচ বছরে মমতা এ ব্যাপারে তেমন টু শব্দ করেননি। বরং দলীয় নেতা, মন্ত্রীরা একের পর এক দুর্নীতির ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। সারদা, রোজভ্যালি, নারদসহ নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তাঁর দলের নেতা–নেত্রী, সাংসদ, বিধায়ক ও মন্ত্রীরা। ফলে মমতার দল রাজ্যব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়ে। তবুও মমতার এ ব্যাপারে তেমন টনক নড়েনি।

কিন্তু এবারের এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল সবকিছুকে উল্টে দেয়। মমতার দল বিপুল ভোটে কার্যত পরাস্ত হয় বিজেপির কাছে। পশ্চিমবঙ্গের যে ৪২টি আসনে এবার মমতা একাই জয়ের স্বপ্ন দেখছিলেন, সেখানে মমতা পান মাত্র ২২টি আসন। বিজেপি ১৮টি। এই ফলাফলের পর মমতার সব হিসাব উল্টে যায়। মমতা বুঝতে পারেন দুর্নীতিই তাঁর দলকে ডুবিয়েছে। এরপরই মমতা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন কোনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না দল। যাঁরা দুর্নীতি করে টাকাপয়সা নিয়েছেন, মমতার কথায় সেই সব ‘কাটমানি’ ফিরিয়ে দিতে হবে। এই ঘোষণার পর বিরোধীরা অস্ত্র পেয়ে যায়। তারা মমতার দলের নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। ফলে শুরু হয়ে যায় তৃণমূলের কাটমানি নেওয়ার বিরুদ্ধে জোর আন্দোলন। এই আন্দোলনের জেরে বহু নেতা মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন কাজের জন্য নেওয়া টাকাও ফেরত দিতে শুরু করে।

গতকাল বর্ধমানে আয়োজিত জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা প্রশ্ন তোলেন, পুলিশ সিভিক ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে টাকা তুলছে। আর এই টাকা নাকি কলকাতার পুলিশের কাছে যাচ্ছে। সড়কে যখন টাকা তোলা হচ্ছে তখন চাঁদা আদায়কারীরা বলছেন, এই টাকা কলকাতায় পাঠানো হয়। বিষয়টি নিয়ে মমতা প্রশ্ন তোলেন, কে চাইছে টাকা, কাকে টাকা পাঠাতে হয় কলকাতায়? এরপরই মমতার কাছে বসা রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছোড়েন, ‘তোমরা টাকা নাও নাকি?’

এ সময় বিব্রত হয়ে পড়া নিরাপত্তা উপদেষ্টা জবাব দেন, ‘না ম্যাডাম, প্রশ্নই ওঠে না।’ তারপরের প্রশ্ন, ‘তাহলে কারা নেয়, টাকা কলকাতায় পাঠানোর কথা বলে?’ এই প্রশ্নবাণে হতচকিত হয়ে যান প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দেওয়া রাজ্যের কর্তাব্যক্তিরা।

এরপরই মমতা রাজ্য পুলিশের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সরকারের মুখ। ভালো কাজ করলে কৃতিত্ব পান। খারাপ কাজ করলে প্রশ্নের মুখে পড়েন। এসব চলবে না। এর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।’