দলের নাম করে চাঁদা নিলেই গ্রেপ্তার: মমতা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

একদণ্ড শান্তিতে নেই পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজ দলের নেতাদের দুর্নীতি তাঁকে এখন কুরে কুরে খাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার হুগলি জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বলেছেন, দলের নামে টাকা তোলা তিনি বরদাশত করবেন না। কেউ টাকা তুললে পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করবে।

২০১১ সালে বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসেন মমতা। ক্ষমতায় আসার পর তাঁর দলের নেতারা ঘোষণা দিয়েছিলেন, ৩৪ বছর নয়, এবার রাজ্যের শাসনক্ষমতায় ৫০ বছর থাকবে তৃণমূল। সেই আশা নিয়ে রাজ্য শাসনে ব্রতী হন মমতা। তবে দুর্ভাগ্য মমতার। নিজে সৎ নেত্রী হিসেবে প্রচার পেলেও ক্ষমতায় আসার পর তাঁর দলের নেতাদের মধ্যে ঢুকে পড়ে দুর্নীতি।

প্রথম পাঁচ বছরে মমতা বুঝতে পারেননি, তাঁর দলের নেতা-মন্ত্রীরা দুর্নীতিতে এতটা জড়িয়ে পড়ছেন। তবে দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর মমতার দলের নেতা-মন্ত্রীদের দুর্নীতির নানা ঘটনা সামনে আসে। তৃণমূল নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়করদের নাম জড়িয়ে পড়ে সারদা, রোজভ্যালি, নারদের মতো চাঞ্চল্যকর সব মামলায়।

তারপরও এসব ঘটনাকে খুব বেশি আমল দেননি মমতা। তবে চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচন মমতার চোখ খুলে দিয়েছে। যে মমতা পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসন একাই জয়ের স্বপ্ন দেখছিলেন, সেখানে তাঁকে ২২টি আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এরপরেই মমতা বুঝতে পেরেছেন, সত্যিই তাঁর পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। দুর্নীতিই তাঁর দলের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করেছে।

এরপরই মমতা ঘোষণা দেন, তিনি তাঁর দলে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না। এই লক্ষ্যে তিনি ঘোষণা করেন, যেসব নেতা সরকারি প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়নমুখী প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে মানুষের কাছ থেকে চাঁদা বা ‘কাটমানি’ নিয়েছেন, তা অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে। এই ঘোষণার পর রাজ্যব্যাপী শুরু হয় ‘কাটমানি’ ফেরত দেওয়ার আন্দোলন। বহু তৃণমূল নেতা ফিরিয়ে দিতে শুরু করেন অর্থ।

‘কাটমানি’ ফেরত দেওয়ার দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর পৌরসভার কাউন্সিলর রঞ্জন মিশ্রের বাড়িতে চড়াও হন স্থানীয় লোকজন। তাঁদের দাবির মুখে বিকেলে ওই কাউন্সিলর ঘোষণা দেন, ‘কাটমানি’ হিসেবে নেওয়া ২৬ লাখ রুপি তিন মাসের মধ্যে ফেরত দেবেন তিনি। প্রয়োজনে জমি বিক্রি করে ওই টাকা ফেরত দেবেন।

গত সোমবার বর্ধমান জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক শেষে মমতা ঘোষণা দেন, কোনো সড়কে যানবাহন থেকে চাঁদা তোলা যাবে না।

এরপর গতকাল হুগলি জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা সরাসরি জানিয়ে দেন, কেউ যদি দলের নামে টাকা চায়, তবে তাঁদের গ্রেপ্তার করবে পুলিশ। তিনি বলেন, ‘কেউ কাউকে টাকা দেবেন না। দলও কারও কাছ থেকে টাকা নেয় না। দলের নাম নিয়ে টাকা তুললে তাকে গ্রেপ্তার করিয়ে দেব। প্রশাসন কঠোর হাতে এদের মোকাবিলা করবে।’