ইউরোপের গণমাধ্যমে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা

আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে কোনো রকম চুক্তি ছাড়াই যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) নিশ্চিত করতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গত বুধবার পাঁচ সপ্তাহের জন্য পার্লামেন্ট স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ইইউ কিংবা ইউরোপের নেতারা এখনো কোনো মন্তব্য না করলেও বিভিন্ন ইউরোপীয় পত্রিকা বিষয়টিকে ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক জালিয়াতি ও ব্রিটিশ গণতন্ত্রের জন্য কালো দিন বলে উল্লেখ করেছে।

স্পেনের দৈনিক পত্রিকা ‘এল মুন্ডো’ লিখেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে জনসন এই নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই রাজনৈতিক জালিয়াতি শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের জন্য ভালো হবে কি না, তা দেখার বিষয়। চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট যুক্তরাজ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা পরিষ্কার নয়। তবে জনসনের জাতীয়তাবাদী রাজনীতি শুধু যুক্তরাজ্যে নয়, পুরো মহাদেশেই প্রভাব ফেলবে।

ইতালির বাণিজ্যিক শহর মিলানের দৈনিক ‘করিয়ারে ডেলা সেরা’ লিখেছে, যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলগুলো পার্লামেন্টে কোনো সম্ভাব্য চুক্তি বা চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট ঠেকাতে সবেমাত্র একটি চুক্তিতে এসেছিল। কিন্তু বিরোধী দলগুলোকে থামাতে জনসনের এই ঝুঁকিপূর্ণ সাংবিধানিক পদক্ষেপ আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের শামিল। প্রধানমন্ত্রী জনসন ইইউ জোটের সঙ্গে সমস্যাযুক্ত শর্তগুলো পুনর্বিবেচনার বিষয়ে আলোচনা করতে পারতেন।

সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরের ‘নিউ জুরিখ’ পত্রিকা লিখেছে, কোনো রাজনৈতিক নেতারই নিজের লক্ষ্য ও অভিলাষ পূরণের জন্য এতটা নির্মম হওয়া উচিত নয়। প্রধানমন্ত্রী জনসনের পার্লামেন্ট স্থগিতের ঘোষণা থেকেই বোঝা যায়, তিনি মূলত আলোচনা ও গণতান্ত্রিক পন্থায় না গিয়ে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ চান।

হল্যান্ডের পত্রিকা ‘দ্য ফলক্সক্র্যান্টে’ লিখেছে, বরিস জনসন ভবিষ্যতে নতুন নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছেন এবং সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই পার্লামেন্ট স্থগিত করেছেন। এখানে তাঁর দেশপ্রেমের চেয়ে নিজের রাজনৈতিক অভিলাষই মুখ্য হয়ে উঠেছে।

ফরাসি সংবাদপত্র ‘লিবারেশন’-এর মতে, পার্লামেন্ট স্থগিতের ঘোষণা ব্রিটেনের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জালিয়াতির শামিল। তিনি দেশটির জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করছেন। শাসনতান্ত্রিক আইনের ফোকর গলিয়ে তিনি যা করছেন, তা জনগণের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা।

বুধবার পার্লামেন্ট স্থগিতের ঘোষণার পর গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে তাঁর ব্রেক্সিট-বিষয়ক মুখপাত্র আবার সপ্তাহে দুদিন করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান। তবে ব্রেক্সিট বিষয়ে যদি কোনো কার্যকর চুক্তি না হয়, তবে তিনি চুক্তি ছাড়াই ৩১ অক্টোবর ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চান।