গণপিটুনি রোধে পশ্চিমবঙ্গে নতুন আইন

রাজ্য বিধানসভা ভবন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
রাজ্য বিধানসভা ভবন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে গণপিটুনি রোধে নতুন বিল পাস করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজ্য বিধানসভায় ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল (প্রিভেনশন অব লিঞ্চিং) বিল, ২০১৯’ নামের বিলটি পাস করা হয়েছে। মূলত, ধর্ম, বর্ণ, জাতিগত বিভেদ ও বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে ভারতে যেভাবে পিটিয়ে মারার প্রবণতা বাড়ছে, তা রোধ করার জন্যই পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ বিল পাস করেছে।

গণপিটুনিতে কারও মৃত্যু হলে দোষী ব্যক্তির সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে এই বিলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে দোষী ব্যক্তিকে দিতে হবে এক লাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানা। আর জখম হলে দোষী ব্যক্তির সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ রুপি জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। গুরুতর জখম করা হলে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ তিন লাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে গণপিটুনির মতো পরিস্থিতি তৈরি করা হলে এর জন্য নেপথ্য ব্যক্তিরও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। সাক্ষী বা আক্রান্ত ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখানো হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে ওই ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। এ ক্ষেত্রে হামলায় আহত ও গুরুতর জখম ব্যক্তিদের পক্ষে বিনা মূল্যে আইনি সাহায্য দেওয়ারও বিধান রাখা হয়েছে। তাদের সরকারি এবং পৌরসভা ও করপোরেশনের হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

এই বিল কার্যকর হলে ছেলেধরা, চোর ও ডাইনি সন্দেহে গণপিটুনির মতো ঘটনার প্রবণতা কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিলের ওপর আলোচনার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে আনা হয়েছে এই বিল। বিধবা বিবাহ চালু, বাল্যবিবাহ রোধ এবং সতীদাহ প্রথা রোধের মতো যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বাংলার এই আইনসভা থেকে। গণপিটুনির মতো সামাজিক ব্যাধি দূর করার জন্য এই প্রথম বাংলাই পথ দেখাল গোটা দেশের। মুখ্যমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, বাংলার পথ ধরে এবার ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও আনা হবে গণপিটুনি রোধে এ–সংক্রান্ত বিল।