এনআরসি: ২০ লাখ কমায় অস্বস্তিতে বিজেপি

আসামের রাজধানী গুয়াহাটিতে প্রকৃত নাগরিকদের নামের তালিকার কার্যালয়ে কড়া নিরাপত্তা। এএফপি ফাইল ছবি
আসামের রাজধানী গুয়াহাটিতে প্রকৃত নাগরিকদের নামের তালিকার কার্যালয়ে কড়া নিরাপত্তা। এএফপি ফাইল ছবি

সংখ্যাটা এক ধাক্কায় ২০ লাখের বেশি কমে যাওয়ায় আসামজুড়ে এ মুহূর্তে যতটা স্বস্তি, শাসক বিজেপির অভ্যন্তরে ঠিক ততটাই অস্বস্তি বেড়ে গেছে। তা না হলে রাজ্য বিজেপির দুই নম্বর মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে এভাবে সংশয়ী ও সন্দিহান হতেন না। বলতেন না, এই তালিকায় তাঁরা ভরসা রাখতে পারছেন না।

ভরসা না রাখার কথা জানানোর মধ্য দিয়ে হিমন্ত হয়তো অজান্তেই তাঁর দলের গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করে ফেলেছেন। আশ্চর্যের যা, যেদিন তিনি এই উদ্বেগের কথা জানাচ্ছেন, এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হলো তার অন্তত ১২ ঘণ্টা পর। আজ শনিবার সকাল ১০টায় সেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর এনআরসির রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা জানান, রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৩ কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার ৪ জন তাতে স্থান পেয়েছেন। জায়গা হয়নি ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের। আংশিক স্বস্তির বিষয় এটাই, খসড়া তালিকায় যত নাম বাদ পড়েছিল, প্রায় ৪২ লাখ, চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পড়া সংখ্যা তার ৫০ শতাংশেরও কম।

ছবি টুইটার
ছবি টুইটার

আর এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্য বিজেপির বিস্ময়, ক্ষোভ ও উদ্বেগের প্রধান কারণ। কেননা, ‘বিদেশি খেদাওয়ের’ যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু, চূড়ান্ত তালিকা তা সফল করতে পারেনি। শুধু তা–ই নয়, বিজেপির আশঙ্কা, মুসলমান বাঙালির তুলনায় বাদ পড়া নামের তালিকায় হিন্দু বাঙালি ও উপজাতিদের নাম বেশি। এই ‘হিতে বিপরীত’ অবস্থার জন্যই বিস্মিত হিমন্ত বলে ফেলেছেন, বাংলাদেশ লাগোয়া জেলা দক্ষিণ সালমারা বা ধুবুরিতে তালিকা থেকে বাদ পড়া মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে কম। তুলনায় কারবি আংলংয়ের মতো ভূমিপুত্র এলাকায় বাদ পড়েছেন বেশি মানুষ। সেই কারণেই তাঁরা এখানেই থামছেন না। হিমন্ত বলেছেন, ‘আরও তালিকার অপেক্ষায় থাকুন। অপেক্ষা করুন অন্য ব্যবস্থার।’ তিনি বলেছেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম এনআরসি প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু সমাধান হোক। ভালোয় ভালোয় কাটুক। কিন্তু এটাও ঠিক, এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আসাম বিদেশিমুক্ত হবে না। সে জন্য বিজেপির ওপরেই আপনারা ভরসা রাখুন।’

এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট, বিজেপি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। ‘ভূমিপুত্রদের’ নাগরিকত্ব রক্ষার তীব্র আকুতি তাঁদের মধ্যে অনুভূত হচ্ছে। রাজ্য বিজেপি ইতিমধ্যেই প্রচার শুরু করেছে, নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের মাধ্যমে প্রতিবেশী তিন রাষ্ট্রের সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি যথাশিগগির পালন করা হবে।

রয়টার্স ফাইল ছবি।
রয়টার্স ফাইল ছবি।

এরই পাশাপশি বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব দুটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া শুরু করেছে। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং তালিকাভুক্ত না হওয়া মানুষের আইনি সহায়তা দেওয়া। আজ থেকেই শুরু হচ্ছে ১২০ দিনের নতুন যাত্রা। এই সময়ের মধ্যে তালিকায় নাম না আসা লোকজন ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হতে পারবেন। সেখানে সুরাহা না পেলে হাইকোর্ট। তারপর সুপ্রিম কোর্ট। এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরেই বোঝা যাবে ১৯ লাখ মানুষের মধ্যে কতজন অনাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

বিজেপির আইনজ্ঞ সেলের সদস্য ও দলের নেতা বিবেক রেড্ডি আজ নতুন এক ‘সম্ভাবনার’ কথা বলেছেন। সর্বভারতীয় এক নিউজ চ্যানেলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এনআরসি নিয়ে যে আশ্বাস দিয়েছেন, সেটাই শেষ কথা বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। ভবিষ্যতে অনেক কিছুই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা সফরে গিয়ে জয়শঙ্কর স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, এনআরসি ভারতের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়।